ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৪ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

ছয় মাসে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৪৭৫ শ্রমিকের মৃত্যু

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৯:১৫, ১ জুলাই ২০২৪

ছয় মাসে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৪৭৫ শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

বিগত ৬ মাসে (১ জানুয়ারী - ৩০ জুন ২০২৪) সারাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ৪২০ টি দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে একই সময়ে সারাদেশে ২৮৭ টি দুর্ঘটনায় ৩৮৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) এই জরিপ পরিচালনা করেছে।

 জরিপে পাওয়া কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ২৫০ জন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে) ৭৪ জন, কৃষি খাতে ৬৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৩৩।

কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২০২৪ (১ জানুয়ারি - ৩০ জুন): পরিবহন খাতে দুর্ঘটনা ২২৭, মৃত্যু ২৫০; সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খাতে দুর্ঘটনা ৬৩, মৃত্যু ৭৪; কৃষি খাতে দুর্ঘটনা ৬১, মৃত্যু ৬৬; নির্মাণ খাতে দুর্ঘটনা ৩৯, মৃত্যু ৫২; কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান খাতে দুর্ঘটনা ৩০, মৃত্যু ৩৩। সব মিলিয়ে মোট ৪২০ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৭৫।

মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১০ জন (পরিবহন খাতের ২৫০ ছাড়াও অন্যান্য খাতের শ্রমিক ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসার পথে দুর্ঘটনাসহ); বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫২ জন; বজ্রপাতে ৫১ জন; মাঁচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছে ২৩ জন; শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ১৫ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৮ জন; পানিতে ডুবে ৬ জন; আগুন ও বিস্ফোরণে ৩ জন; গার্ডার ধসে ১ জন; এবং অন্যান্য কারণে ৬ জন।

জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপোরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালনা ইত্যাদি হলো গত ছয় মাসের  পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ।

কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া, ভেজা হাতে মটর চালু করা, মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড উঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা সমূহের  কারণ হিসেবে  দেখা গেছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে।

 আনুষ্ঠানিকভাবে উপরোক্ত জরিপ তথ্য প্রকাশকালে এসআরএস এর এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বেড়ে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত নির্ভর, যেখানে শ্রম আইনের প্রতিপালন হয় না বললেই চলে, যার ফলে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী আরো বাড়াতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে। পরিবহন, সেবা, কৃষি, নির্মাণ ও উৎপাদন খাতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। কারখানা ও প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক নিরাপত্তা নির্দেশনা প্রণয়ন, ঝুঁকি নিরূপনসহ দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান, সেইফটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মালিক সমাজের। মালিক কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানের। শ্রমিকের দায়িত্ব মালিকের নির্দেশনা মেনে কাজ করা। সরকার, মালিক, শ্রমিক সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কর্মদুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

 উল্লেখ্য, সেইফটি এন্ড রাইটস একটি অলাভজনক জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যার লক্ষ্য হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষা করা । এসআরএস বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ, আলোচনা ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে কর্মদুর্ঘটনা বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। কর্ম দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিনামূল্যে আইনী সহায়তাসহ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে সহযোগিতা করছে। 

মেসেঞ্জার/মুমু