
ছবি: সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৫টি সংগঠন। বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উগ্রবাদী, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী, হত্যা-খুন-ধ্বংসের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের (তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘ) সদস্যরা গণহত্যা, গণধর্ষণ ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনে পৈশাচিক ভূমিকা পালন করেছিল।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৫টি সংগঠনের নেতাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যৌথ বিবৃতি প্রদানে নেতারা হলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) সভাপতি রাশিদুল হক ননী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহাম্মেদ, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস আলো, সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদ্রিতা সৃষ্টি, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রবিন হোসেন জয়, জাতীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, স্বাধীনতার পর সংবিধানের (৩৮) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘকে (পরে ইসলামী ছাত্রশিবির) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে সংবিধানের (৩৮) ধারার উল্লেখিত অনুচ্ছেদগুলো বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর পুনরায় বৈধভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পায় জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির (পূর্বে ইসলামী ছাত্র সংঘ)।
জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির আবারও প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আর্বিভূত হয় উল্লেখ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের ছায়ায় ৮০’র দশকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির আবারও তাদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ রাজনীতি চালু করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৮০’র দশক থেকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ ও মুক্তিযোদ্ধারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ শহিদ জননী জাহানারা ইমাম এর নেতৃত্বে গঠিত গণআদালত থেকেও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষেদ্ধের দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইনগতভাবে নিষিদ্ধের দাবি প্রায় ৫ দশকের দাবি করে ছাত্রনেতারা বলেন, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেয়। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তাবিষয়ক থিঙ্কট্যাংঙ্ক আইএইচএস জেনস বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম তালিকাভুক্ত করে।
ছাত্রনেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বাগত জানাচ্ছে। একইসাথে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল সাংগঠনিক পর্যায়ে যুক্ত ব্যক্তিদেরও সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকা প্রকাশ এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টারসহ মৌলবাদী-সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে অর্থায়নের সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার জোর দাবি জানান।
মেসেঞ্জার/শাহেদ