ঢাকা,  বুধবার
১৩ নভেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক হাসপাতাল

ইউএনবি, ঢাকা

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ৯ নভেম্বর ২০২৪

অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ঢামেক হাসপাতাল

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত চাপের কারণে রোগীদের সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হচ্ছে।

হাসপাতালে ভর্তির পরই তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত খাদ্য ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবের সম্মুখীন হন। আসন সংকটের কারণে অনেক রোগীকে জনাকীর্ণ করিডোর ও ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান খান ক্রমবর্ধমান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, চলমান এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছেন।

চিকিৎসায় বিলম্ব ও ওষুধের অভাবঃ ময়মনসিংহে এক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া আলাল উদ্দিন ৪ অক্টোবর থেকে করিডোরে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু এখনও বিছানা পাননি। তার ভাই জালাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় নার্সদের পাওয়া যায় না, এমনকি ডাক্তারদেরও খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

আরেক রোগী ২৪ বছর বয়সি জাহিদ হাসান ২ অক্টোবর ভর্তি হয়েছেন। তিনিও একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা জাহিদের বাবা জানান, ‘প্রেসক্রাইব করা একটি ইনজেকশন এখনও দেওয়া হয়নি, বলা হচ্ছে সেটি স্টকে নেই, যদিও হাসপাতালের ফার্মেসিতে তালিকাভুক্ত।’ ওষুধের অভাবে অনেক রোগী বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

পরিচ্ছন্নতার অভাবঃ হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে পরিচ্ছন্নতার মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা।

তবে অপরিচ্ছন্নতার জন্য লোকজনের আচরণও দায়ী বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক। তিনি  বলেন, ‘শৌচাগারগুলোর পাইপলাইনে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় বস্তু আটকে যায় এবং পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া প্রতিটি  শৌচাগার প্রায় ১০ জন লোক ব্যবহার করেন, তাই সঠিক স্যানিটেশন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।’

হাসপাতালের রান্নাঘরেও দেখা গেছে নানা রকম সমস্যা। যেখানে রান্না করা হচ্ছে, তার আশপাশে বর্জ্য জমে রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যগুলো ঢেকে রাখা হয়নি। এগুলো রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করছে।

জনবল সংকট ও আর্থিক সীমাবদ্ধতাঃ পরিচালকের মতে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, ‘জনবল না বাড়ালে এরকম অব্যবস্থাপনা চলতেই থাকবে।’

এছাড়াও, প্রতিদিনের জন্য রোগীপ্রতি মাত্র ১৫০ টাকা খাদ্য বাজেট যথেষ্ট নয় বলেও তিনি জানান। একই সঙ্গে খাবারের মান উন্নয়নের জন্য এটি ২০০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেন।

দুর্নীতির কারণে আর্থিক চাপঃ বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, রোগীদের জন্য হুইলচেয়ার সহায়তা মৌলিক সেবার মধ্যেই পড়ে। অথচ এর জন্য হাসপাতালের কর্মচারীদের ৫০-১০০ টাকা পরিমাণ বকশিস দিতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওয়ার্ড সহকারী বলেন, ‘রোগীরা যদি আমাদের কিছু দেন, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত খরচ মেটাতে সহায়ক হয়।’ হাসপাতালের পরিচালক এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কাজে জড়িতদের আমরা বরখাস্ত করেছি, তবে পুরোপুরি এই প্রথা নির্মূল করা এখনো চ্যালেঞ্জিং।’

দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতিঃ দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বেশকিছু বিষয়ে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য বিকেন্দ্রীকৃত নিয়োগ ব্যবস্থা এবং ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর সুষম অনুপাত। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ফার্মেসি, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং ব্যক্তিগতভাবে বিপুল পরিমাণ খরচ।

চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানঃ ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ। এরপর ২০১৩ সালে হাসপাতালের নতুন কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। তবে এ হাসপাতালে সবসময়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকে। দেশে ৩৯টি সরকারি ও ৬৮টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থাকা সত্ত্বেও, প্রয়োজন অনুযায়ী, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দিতে এখনও সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো- রোগীদের গুণগত মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া। তারা বলেন, এটি কেবল চিকিৎসা সেবা দেওয়া নয়, বরং রোগীর সুরক্ষা, গোপনীয়তা ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করাও। হাসপাতালগুলোকে তাদের সেবা প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও উন্নত করতে হবে; যাতে জনগণ সর্বোচ্চ মানের চিৎিসা সেবা পায়।

মেসেঞ্জার/ইএইচএম