ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে দিতে চাই : ডাক্তার শফিকুর রহমান

রংপুর ব্যুরো অফিস

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে দিতে চাই : ডাক্তার শফিকুর রহমান

ছবি: মেসেঞ্জার

আমরা আগামীর বাংলাদেশ আমাদের তরুণদের হাতে দিতে চাই উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামাাতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা ঘর পালানো বউ, আবার পালিয়ে গিয়ে বলে আমি তালাক পাই নাই। বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই যে দেশকে আর কেউ ভাগ করতে পারবে না। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু এই সমস্ত নোংরামি করে জাতির কপাল চুরি করে বিদেশে টাকা পাচার করতে পারবেনা।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে পাঁচটায় রংপুরের মিঠাপুকুর ডিগ্রী কলেজ মাঠে উপজেলা জামাত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মিঠাপুকুর উপজেলা জামাত আমির আসাদুজ্জামান শিমুলের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, জামাতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা জামায়াতের আমীর আধ্যাপক গোলাম রব্বানী, রংপুর মহানগর জামাত আমির এটিএম আজম খান, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা মো. এনামুল হক উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ও ইউপি চেয়ারম্যান  শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা আমীর জয়নাল আবেদীন (মাষ্টার) সহ রংপুর জেলা ও মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে তিনি পীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভা এবং গাইবান্ধায় জেলা জামাত আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "আমরা আগামীর বাংলাদেশ আমাদের তরুণদের হাতে দিতে চাই। তরুণরা আগামীর বাংলাদেশের চালক হবে ইনশাআল্লাহ। মন খারাপ করবেন না যারা মুরুব্বি। আমাদের সন্তানেরা যদি সুন্দরভাবে দেশ চালায় তাহলে সব থেকে বেশি খুশি হব আমরা মুরুব্বিরা। আপনারাও খুশি হবেন।

ডা. শফিক বকেন, "আমরা এমন একটা দেশ চাচ্ছি যে দেশের মানুষ তাদের অধিকার চাওয়ার প্রয়োজন হবে না। রাষ্ট্র তার অধিকার দিতে বাধ্য হবে। সেই মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, চাঁদাবাজ মুক্ত বাংলাদেশ, দখলদার মুক্ত বাংলাদেশ যদি আপনারা চান তাহলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে আপনাদের ভালোবাসা দিতে হবে। আমরা আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতার কাঙ্গাল। সমর্থনের কাঙ্গাল। আপনারা কি একটু ভালোবাসা আমাদের দিবেন। একটু সহযোগিতা করবেন। একটু সাহায্য করবেন। একটু পাশে থাকবেন। একটু বুকে জড়িয়ে ধরবেন। সেই আগামীর বাংলাদেশ করার সংগ্রাম ও লড়াইয়ে সাথী হিসেবে আপনাদের পাশে চাই। সেই আগামীর বাংলাদেশ এবং কোরআনের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।"

জামায়াত আমির বলেন, "আমাদের কোন দিদির বাড়ি নাই, পিসির বাড়ি নাই, মাসির বাড়ি নাই। দেশের বাইরে কোন স্বামীর বাড়িও নাই। যাদের আছে তারাই পালিয়ে যায়। আবার ঘর পালানো বউ বলে, আমি তালাক পাই নাই।

শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে ডাক্তার শফিক বলেন, "তুমি (শেখ হাসিনা) তো পালিয়েই গেছো। তোমার আবার তালাক কি। তোমার মত যারা এই দুনিয়ায় পালিয়ে গেছে  তাদের কোন তালাকের  তোয়াক্কা করে নাইসেই সমাজের মানুষ। আমরাও তোমার তালাকের পরোয়া করি না। ভেবেছিলাম পালিয়ে গিয়েছো। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হও নাই। এখন এই ফুঁস-ওই ফুঁস, ফুঁসফাঁস নানান ধরনের ফুসফাঁস করছো। মাঝখানে একটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর (সনাতন ধর্মাবলম্বী) আবেগ নিয়ে খেলছো। একে একে মহান আল্লাহ সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করছেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থনে যুবক-যুবতী, ছাত্র ছাত্রী তরুণ তরুণী, রাস্তায় নেমেছে। গুলির পরোয়া করেনি। আমরা এই ষড়যন্ত্রের পরোয়া করবে না তারা।"

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "আওয়ামী লীগ খুন করেছে। গুম করেছেন। আয়না ঘর তৈরি করেছেন। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় সকল বিরোধীদলের ওপর তারা নির্যাতন করেছেন। তারা জুলুম করেছেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিশাল একটা বিধ্বস্ত জেলে একা রেখে তাকে নিয়ে আবার উপহাস করেছেন।। অনেক কিছুই করেছেন তারা (আওয়ামী লীগ) কোন মানুষকে সম্মান দেখাতে শেখেনি।"

ডা. শফিক বলেন, "আওয়ামী লীগ নিজেদের দেশের মালিক বানিয়ে ছিলেন। দেশের জনগণকে বানিয়েছিলেন ভাড়াটিয়া। আচ্ছা বলেন তো মালিক কি তার ঘর ছেড়ে কখনো পালায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ হলো এদেশের ভাড়াটিয়া। জনগণ হলো এদেশের বাড়িওয়ালা। সে কারণে ভাড়াটিয়া পালিয়ে গেছে। এ সময় তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের পালিয়ে যাওয়া এবং গ্রেপ্তারের কথা শোনান উপস্থিত জনগণকে।"

নারীদের পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে ডাক্তার শফিক বলেন, নারীরা তাদের স্বাচ্ছন্দ মতো পোশাক পড়বে। আমরা ক্ষমতায় গেলে এ ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করবো না।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের কচুকাটা করবে। কি নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা তাদের। কেন আমরা তাদের কচুকাটা করব?

তারা হযরত আদম আলাই সাল্লাম এবং হাওয়া আলাইহিস সালামের বংশধর নয়? তাদেরকে কচুকাটা করার জামায়াত কে? বরঞ্চ এই জিজুর ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ ৫৩টি বছর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে চাই, যতই ষড়যন্ত্র হোক। সংখ্যালঘুদের জন্য সবার আগে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করবে।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঠিক তদন্ত এবং সেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যা লঘুদের সর্বনাশ যুগে যুগে বছরের পর বছর  করেছে। এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত হোক। যদি উঠে আসে আমি ডাক্তার শফিকুর রহমান বা আমার দল জামায়াত ইসলামীর কর্মী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করেছে তাহলে সারা বিশ্ব আমাকে এবং আমার দলকে ঘৃণা করবে। আমরা সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের কাহিনীর শ্বেতপত্র দেখতে চাই। জাতি জানতে চায়, কারা সংখ্যালঘুদের  ওপর অত্যাচার করেছে। যারা এই কাজ করেছে তাদেরকে আমরা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাই। আমরা মাইনোরিটি এবং মেজারোটির ধাক্কাধাক্কি কে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাই। বলতে চাই আমরা সবাই বাংলাদেশী। যারা এই দেশের নাগরিক তারা সকলেই সমমর্যদার ভিত্তিতে নাগরিক। তারা গর্বিত নাগরিক। যদি মসজিদ পাহারা দেয়ার দরকার না পড়ে, তাহলে মন্দির, মঠ, প্যাগোডাও পাহারা দেয়ার দরকার হবে না।এটি  নিশ্চিত করা হবে। এবার তার বাস্তবতা আপনারা দেখেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে জামায়াত আমীর বলেন, "ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলে দুই দিনে পাঁচ লাখ মানুষ খুন হবে। কিন্তু কয়জন মানুষ খুন হয়েছে। ওরা (আওয়ামী লীগ)  খুনি হতে পারে। ওরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে। ওরা নিষ্ঠুর হতে পারে। পাষাণ হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশটাকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসে। তার প্রমাণ দেখিয়েছে ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি এবং সারা বিশ্বের মানুষ। ৫ লক্ষ তো দূরের কথা পাঁচজনও খুন হয়নি। এটাই আমাদের সৌন্দর্য।"

জামায়াত আমির বলেন, "আমরা আমাদের মজলুম নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে  আহ্বান করেছিলাম। দুঃখ কষ্ট বুকে চাপা রেখে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ান। দেশকে রক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সারা দেশবাসী প্রচন্ড ধরনের দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে। ইনশাল্লাহ এই দেশ সামনে এগিয়ে যাবে আর কেউ রশি দিয়ে পেছনে আটকায় রাখতে পারবে না।"

মেসেঞ্জার/মান্নান/তুষার