ছবি : মেসেঞ্জার
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টেন্ডারবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি’র মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় গণপূর্তের রাজশাহী বিভাগে। বছর না-যেতেই ৮ মাসের মধ্যে দুর্নীতি অনিয়মের আমলনামা নিয়ে আবারও ফিরেন ঢাকায়। ঢাকায় ফিরতে জোর তদবীর ও কোটি টাকা খরচ করেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রকৌশলী মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালাবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ অবধৈ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ একজন নারীলোভী নন বিসিএস প্রকৌশলী হিসাবে সবাই তাকে চেনেন ও জানেন। উচ্চপর্যায়ের তদবীরে লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই কোনো রকম ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে এসডিই হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ ডিউটি না করে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে বেতন তুলেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আলাদিনের চেরাগের মতো প্রমোশনের পাশাপাশি শত কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিকও হয়েছেন দুর্নীতিবাজ এই নির্বাহী প্রকৌশলী। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দিন তাঁকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে বদলী করে দেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই সেই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী আবারও ঢাকায় বদলি হয়ে ফিরে আসেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চাকুরী জীবনের শুরু থেকেই তিনি নানাবিধ অনিয়ম -দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা। অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গড়েছেন আলিশান বাসভবন। গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ৩০ বিঘারও বেশি জমি। তিনি গণপূর্তে ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত চাকরি না করেও এককালীন বেতন-ভাতা তুলেছেন। একই সময়ে তিনি বিআইডব্লিটিএ থেকেও বেতন তুলেছেন। কোনো সরকারি কর্মকর্তার জন্য এটি নজিরবিহীন ঘটনা।
রাজধানীর জিগাতলা কোয়ার্টারের কাজ না করিয়ে এসডিই এবং এসও এর মতামত সনদ ছাড়াই ঠিকাদারের সাথে টাকা ভাগাভাগি করে বিল তুলে নিয়েছেন এমন অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারে লাইটের মূল্য তিনগুণ দেখিয়ে এনার্জী প্লাস কোম্পানির সাথে যোগসাজশ করে লুটে নিয়েছে ৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা লুটেপুটে খেয়ে কাজ অর্ধেক করে এবং কখনো কাজ না করেই পুরো টাকা তুলে নিয়ে ভাগাভাগি করেছেন এ কর্মকর্তা।
গণপূর্তের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর মোটা অংকের অর্থ চাঁদা দিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবের মেম্বার হয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সেখানে উঠতি মডেল ও চলচ্চিত্র নায়িকা ছাড়াও অনেক আবেদনময়ী নারী শরাব শাবাব ও কাবাব নিয়ে আয়েসি সময় কাটান বলে একাধিক সূত্র দাবী করেছে।
রাজশাহীতে পোস্টিং হলেও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন দীর্ঘ সময়। কারণ ঢাকার অবাধ বিচরণ আর অবৈধ উপার্জন কোনটির সুযোগ মিলেনা রাজশাহীতে।
এছাড়া ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকায় ওয়ার্কিং ডিভিশনে পোস্টিং বাগিয়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সফল হন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর। এজন্য তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আস্থাভাজন লোকজনের বাসায় ধর্ণা দিয়ে এখনও চেষ্টা অব্যাহত রেখে বদলি হয়ে ঢাকায় ফিরেন। তিনি বর্তমানে কর্মরত (রিজার্ভ) সংযুক্ত হিসেবে গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ, ঢাকা।
একটি অভিযোগে থেকে আরও জানা যায়, ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট, পাম্প অপারেটর, লিফট অপারেটর, সিসি ক্যামেরা অপারেটর, বড় বাবু বা হিসাব সহকারী, জেনারেটর অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অসংখ্য জনবল। ই/এম বিভাগ- ২ এর অধীনে উপ বিভাগ ৩ ও ৪ এর লোকবল অধিকাংশই রাজশাহীর যা জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়-স্বজন। অভিযোগ রয়েছে এরা আর্থিক লেনদেনে নিয়োগপ্রাপ্ত। এর মধ্যে কিছু লোকবল কোন প্রয়োজন ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বেতন ছিল দ্বিগুণ, এমনকি ঠিকাদারের অধীনস্থ লোকবল দিয়ে চালিয়েছেন বড়বাবুর/সেকশন প্রধানের দায়িত্ব। তিনি ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করতেন তাদেরকে। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে লোকবল নিয়োগ দিয়ে করাতেন ভুয়া বিল ভাউচার।
এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) শামীম আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মেসেঞ্জার/তুষার