ছবি : মেসেঞ্জার
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সর্বনিম্ন ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ৯ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি।
এছাড়া সওজের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩-৪০ শতাংশ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তিনি পালাননি। স্বপদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত এই সৈয়দ মঈনুল হাসান বুয়েটে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা।
এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য এবং আইইবি - ২২ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের প্যানেলে নির্বাচন করে বিনা ভোটে সেন্ট্রাল কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া গ্রামে। মঈনুল হাসানের ক্ষমতার দাপট এতটাই ছিল যে, সেই ক্ষমতার দাপটে তার চাচাতো ভাইকে বানিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য এবং তার আপন ভাই কচি মিয়াকে করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তার নিজের জেলা নড়াইলে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সৈয়দ মঈনুল হাসানের অর্থায়নে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনী দ্বারা নৃশংস হামলা চালায়।
সৈয়দ মঈনুল হাসান ১৯৯৬ এ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৮তম বিসিএসে নিয়োগ পান। এরপর তিনি ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দান করেন।
বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্তও করছে। নিয়োগ ও পোস্টিং বাণিজ্য করেও তিনি বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পিএস অশোক বাবুর ভাগ্নী জামাই রিতেশ বড়ুয়াকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এতো অভিযোগের পরও তার সম্পদ ও ব্যাংকের হিসাব জব্দের কোনো নির্দেশনা দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
নিজের লোক পদায়নে সৈয়দ মঈনুলের ফিরিস্তি অনেক বড়। অভিযোগ রয়েছে, শেখ পরিবারের সদস্য লিটন চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আব্দুল হামিদকে তিনি নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়া মুন্সিগঞ্জের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজাকে ৫ আগস্টেরর পর মাস্টার্স করতে সাউথ কোরিয়াতেও পাঠিয়েছেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনে হাজারো ছাত্র জনতাকে হত্যায় সৈয়দ সৈয়দ মঈনুল হাসান ছাত্রলীগ যুবলীগকে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনার ঘনিষ্ট দোসর গণহত্যার মামলায় কারাগারে আটক সালমান এফ রহমানের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে সৈয়দ মঈনুল হাসানের। আওয়ামী লীগের একটি বলয় তৈরি এবং বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব ঘটানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সৈয়দ মঈনুল হাসানের স্ত্রী ফেরদৌসি শাহরিয়ারও বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের সদস্য। তিনি ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত ছিলেন।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার, বাড়ি কেনা, সন্তানদের আমেরিকায় পড়াশোনা করানোসহ রাষ্ট্রদ্রোহের সব অভিযোগের তদন্ত এবং তদন্তের আগে তিনি যেনো যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করতে জোর দাবি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের ছাত্র জনতার প্রতিনিধিরা।
মেসেঞ্জার/তুষার