
ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে প্রক্সি ভোটে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের জন্য বর্তমানে ভোট দেওয়ার যে পদ্ধতি আছে অর্থাৎ ‘পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম’, এটি অচল সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে একটি ভোটও কাস্ট হয়নি। কমিটি পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন সিস্টেমে ভোট ও প্রক্সি ভোটের সুযোগ রেখে প্রস্তাবনা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে প্রক্সি ভোটে যেতে হবে। এটি বেশ কিছু দেশে আছে। এটি একমাত্র পদ্ধতি যার মাধ্যমে রিয়েল টাইমে প্রবাসীদের ভোট নেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, প্রক্সি ভোটের বিষয়ে ওয়ার্কশপ করা হবে, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে। এরপর রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বলতে পারব কতদিন সময় লাগবে এই সিস্টেম ডেভেলপ করতে। চূড়ান্তভাবে সবাই রাজি হলে বর্তমানে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে একজন প্রবাসী তার ভোট কে দেবেন সেই ব্যক্তিকে পছন্দ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাক বিভাগ, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা দেখেছি চার ধরনের ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারে। ৩৪ দেশে ৪৪টি মিশন অফিসে আমরা তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। প্রবাসীদের সংখ্যা, মিশনগুলোর সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট দেশে কী ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অনলাইন ভোট, স্বশরীরের ভোট, পোস্টাল ব্যালটের কথা বলেছেন। পোস্টাল ব্যালট অচল ভোট ব্যবস্থা। দেশের ভেতরে ৪৩৩টি ভোট হয়েছে। প্রবাসীরা কেউ ভোট দিতে পারেননি। কেননা, এতে ৪০ দিনের মতো লাগে। আর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সময় থাকে ১৫ দিনের মতো। আমরা চারটা দেশে দেখেছি। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিনস, এস্তোনিয়া এবং মেক্সিকো। পাশাপাশি আমাদের উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে পাইলটিং হিসেবে অনলাইন সিস্টেমে করছে। তবে ইউএনডিপির সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, এটা অনেকেই সফল হতে পারেনি। ফলে পূর্বের নিয়মে তারা ফিরে গেছে।
প্রক্সি ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন প্রবাসী বাংলাদেশির হয়ে কেউ একজন তার এলাকায় ভোটটা দিয়ে দেওয়া। আমাদের কমিটির কাছে বিষয় ছিল ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা; পেপার ট্রেইল, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন পদ্ধতি হতে হবে; যাতে করে সব ধরনের প্রবাসী ভোটটা দিতে পারেন। সব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতি ডেভেলপ করে ট্রায়ালের জন্য সাজেস্ট করেছে, যাতে করে টেস্ট করে দেখা যায় কোনটি বাস্তবায়নযোগ্য। পাশাপাশি তারা এটাও সাজেস্ট করেছে যদি আগামী নির্বাচনে সত্যিকার অর্থেই প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই তবে প্রক্সি ভোটিংয়ে যেতে হবে। বর্তমানে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পরিসরে প্রক্সি ভোটিং প্রচলিত আছে। তারমধ্যে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। আর ভারতে শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো, এটা প্রচলিত আছে, পাওয়ার অ্যাটর্নির মাধ্যমে তো জমিজমাও বিক্রি করে থাকি, তাহলে ভোটও তো অধিকার, যদি সেটাকে আমরা এভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তবে একটা ফল আসবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের ভোট আরেকজন দিতে পারে, যদিও এটা প্রক্সি ভোটের সঙ্গে মেলানো যাবে না। তবে আমরা বলছি একটা স্কোপ আছে। এটাই খুব কম সময়ে রিয়েল টাইমে করা সম্ভব। এজন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমরা আমন্ত্রণ জানাবো। প্রাথমিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটি-কে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে। এর বাইরেও কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সহায়তা করতে পারে, সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞকেও আমন্ত্রণ জানাবো। নির্বাচন কমিশনের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানাবো। আমরা একটা সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপ করতে চাই। এই তিন পদ্ধতির তিনটা। এরপর আমরা দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এরপর যদি দেখি এইটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন আমরা সিন্টেম ডেভেলপমেন্টে যাবো। পরে টেস্টিং ও অডিটিংয়ে যেতে হবে। এরপর আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইনালি ট্রায়াল রানে যাবো। আমরা আশা করছি, যদিও এটা কন্ডিশনাল ব্যাপার, সব যদি করতে পারি প্রক্সি ভোটটা মোটামুটি পরিসরে আর বাকিগুলো ট্রায়াল বেসিসে বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আমাদের ধারণা।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসী ভোটারের প্রকৃত তথ্য যদিও নেই। তবে যে ৪৪ মিশন থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি সেখানে এক কোটি ৩২ লাখের মতো তথ্য রয়েছে। যদি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধরে নিই, তবে ভোটার তো এক কোটি। যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই কেবল প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য ৪০টি দেশে আমরা ভোটার কার্যক্রম চালাবো, তবে আগামী নির্বাচনের আগে কতটুকু পারবো জানি না। একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্লোবালি একসেপ্টেড কোনো সিস্টেম আমাদের হাতে নেই। এরকম যদি থাকতো তাহলে সেটাই করতাম। এখন নতুন একটি সিস্টেম ডিভাইস করতে হচ্ছে। আশা করি সফল হবো। নির্বাচন সংস্কার কমিশনও একটা পদ্ধতি সাজেস্ট করেছে। আশা করি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে পারবো। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষজ্ঞরাই এলে বলতে পারবে কতদিন লাগবে। তবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা বলতে পারবো কত সময় লাগবে।
তিনি বলেন, একজন ইনডিভিজ্যুয়াল ভোটারকে তার আস্থার ব্যক্তিকেই নির্বাচন করতে হবে। কেননা, তার প্রক্সি হবে সে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আস্থার ঘাটতি, বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে একজন ব্যক্তিকে অন্তত পক্ষে তো আস্থায় রাখতে। এটা ব্যক্তির পছন্দ হবে। তিনিই নিজেই পছন্দ করবে।
মেসেঞ্জার/জেআরটি