ছবি : টিডিএম
ফেনীর পরশুরামে বাংলাদেশি এক কিশোরকে ধরে নিয়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। পরে তাকে আহত অবস্থায় সীমান্তে ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। ওই কিশোরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বুধবার (১০ মে) বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিএসএফের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এমন ঘটনার আর ঘটবে না বলে বিএসএফের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন বিজিবি ফেনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিব হাসান।
মঙ্গলবার (০৯ মে) দুপুরে উপজেলার বাউরখুমা গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় ওই কিশোরকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আহত কিশোরের নাম মো. ইউনুস হোসেন অন্তর (১৫)। সে পৌর এলাকার উত্তর বাউরখুমা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই কিশোর ছাগল চরাতে ভারত সীমান্তবর্তী ২৬১ নম্বর পিলারসংলগ্ন এলাকায় যায়। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ভারতের কাঁটাতারের গেট দিয়ে বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে ওই কিশোরকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করে। একপর্যায়ে বিএসএফ ওই কিশোরকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়।
আহত ইউনুসের মা আকলিমা আক্তার জানান, ছাগল চরাতে গেলে বিএসএফ ইউনুসকে ধরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙে দেয়। তাঁর ছেলে ২৬১ নম্বরসংলগ্ন স্থানে গেলে বিএসএফ বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে তাকে ধরে হাত-পা বেঁধে লাঠি ও বন্দুকের বাঁট দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায়। এতে ওই কিশোরের একটি হাত ভেঙে যায় এবং শরীরে, পিঠে ও পায়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করাসহ দুই হাতের আঙুল থেঁতলে দিয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বাউরখুমার গ্রামের স্থানীয় কৃষক হারুন মজুমদার জানান, গতকাল এ ঘটনার সময় তিনি ওই স্থানে ধান কাটছিলেন। এ সময় চার-পাঁজজন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের অংশে ঢুকে ইউনুসকে ধরে ফেলে এবং লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় ইউনুসের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিএসএফ গুলি করবে বলে হুমকি দেওয়ায় বাংলাদেশি কৃষকেরা পিছু হটেন।
কৃষক হারুন মজুমদার বলেন, বিএসএফ ইউনুসকে চার ঘণ্টা আটকে রেখে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাংলাদেশের অংশে ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বিকেলে পৌনে পাঁচটায় পরশুরাম উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নির্যাতনের শিকার আহত ইউনুস বলেছে, ‘মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় গেলে বিএসএফের কয়েকজন বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে বিএসএফের চার-পাঁচজন সদস্য লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ডান হাত ভেঙে দেয়। একপর্যায়ে শার্ট-প্যান্ট খুলে আমাকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে।’
এ বিষয়ে পরশুরাম পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বলেন, ‘ইউনুস ছাগল চরাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় গেলে বিএসএফ তাকে ধরে হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এ সময় তার ডান হাত ভেঙে যায়। পরে লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিব হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশি কিশোর সীমান্তবর্তী এলাকায় গেলে ভারতীয় বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর থেকে জানা গেছে, বিএসএফ তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আজ দ্বিপক্ষীয় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফকে অবহিত করলে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
টিডিএম/এএস