ঢাকা,  মঙ্গলবার
২৯ এপ্রিল ২০২৫

The Daily Messenger

অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ ভাষ্কর্য

রাজু আহমেদ, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’ ভাষ্কর্য

ছবি : টিডিএম

কুষ্টিয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দনস্বাধিকার থেকে স্বাধীনতাভাষ্কর্য চত্বর অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে। শহরের এনএস রোডের পাশে পৌর বাজারের সামনে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত ভাস্কর্যটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয়রা।

মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয়রা জানান, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় অযত্নে পড়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে নির্মিত ভাস্কর্যটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ভাস্কর্যগুলোর গায়ের রং নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় ফেটে ভেঙে গেছে। তবে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নাই। এটিকে যেভাবে সম্মান দেওয়ার কথা সেভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এর সবদিকে বেষ্টনি দেয়া দরকার। দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু বলেন, অযত্নে অবহেলায়স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতামঞ্চটির পরিবেশ নোংরা অস্বস্তিকর। ওটা দেখভাল করার কেউ নেই।  এটা খুবই দুঃখজনক। শহরের মাঝখানে কুষ্টিয়া পৌরসভা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা মঞ্চটি তৈরি করেছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করে না কেউ।

তিনি আরও বলেন, ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করার জন্য কারণে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন জিনিসের দোকান বসে। পরিবেশটা খুবই নোংরা। মঞ্চটাকে যদি রাখতে হয়, নামের মূল্যায়ন যদি করতে হয়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তা না হলে মঞ্চটার নামকরণটি উঠিয়ে অন্যত্র করা হোক। যেখানে এটার মর্যাদা দেয়া যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পৌর বাজারের সামনে এনএস রোডের পাশে ১৯৭২ সালে নির্মিতস্বাধীকার থেকে স্বাধীনতাভাস্কর্যটি অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বড় লম্বা দেওয়ালে সুনিপুন কারিগরি দক্ষতায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়।

রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কারের অভাবে ভাস্কর্যের চুনকাম পলেস্তারা উঠে গিয়ে জরাজীর্ণ অবস্থা। অনেক স্থান ভেঙে ফেটে গেছে। ভাস্কর্যটির বেষ্টনি না থাকায় সেখানে সাইকেল, ভ্যান, রিকশা পার্কিং করা হয়েছে। অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। অনেকে জুতা-সেন্ডেল পরেই এটির ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করছেন।

স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতাচত্বরের চারপাশে নোংরা ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতাভাস্কর্যটির অবস্থা আরও খারাপ ছিলো। কুষ্টিয়া পৌরসভা সেটি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যেখানে ভাস্কর্যটি আছে, সেখানে একটি সুপার সপ নির্মাণ করবে পৌরসভা। এজন্য ভাস্কর্যটি সংস্কার করা হচ্ছে না। সুপার সপ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সেই সুপার সপে অনুরুপ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।

১৯৭২ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক . . রেজার উদ্যোগে নাগরিক কমিটির সহযোগিতায় ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। যাদের সহযোগিতা উদ্যোগেস্বাধিকার থেকে স্বাধীনতাচত্বরটি নির্মিত হয়। তারা হলেন এক নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান মাহাবুল হক তারা মিঞা, দুই নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহম্মেদ, তিন নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার শামছুল আলম দুদু এবং চার নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলী। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন শিল্পী শহিদ লুৎফর রহমান।

যেখানে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা চত্বরটি অবস্থিত সেখানে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সিরাজউদ্দৌলা সড়ক সহ মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই সময় কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক . . রেজা সাহেবের উদ্যোগে এবং তৎকালিন নাগরিক কমিটির সহযোগিতায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার নিমিত্তে এই চত্বরটি নির্মাণ করা হয়।

স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতাভাস্কর্যটিতে স্বাধীনতার ইতিহাসে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হয়েছে।

টিডিএম/এএম