আহত অর্জুন মন্ডল ও অপূর্ব মন্ডল। ছবি: ডেইলি মেসেঞ্জার
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সাদিপুর গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিতাপুত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামিদের আটক করে আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুর পাড়ের কলাগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সোনাকুড় শেখপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও সাদিপুর গ্রামের অর্জুন মন্ডলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আব্দুস সামাদ, তার স্ত্রী ও দুই পুত্র জোরপূর্বক কলাগাছ কাটা শুরু করে। অর্জুন মন্ডল তাদের কলাগাছ কাটায় বাঁধা দিতে গেলে আব্দুস সামাদের বড় ছেলে আলাউদ্দীন গাছি দা দিয়ে অর্জুন মন্ডলের মাথার কোপ মারে। এতে পানিতে পড়ে গেলে অর্জুন মন্ডলের পুত্র অপূর্ব মন্ডল, ভাই নকুল মন্ডল ও স্ত্রী লিপিকা মন্ডল ছুটে আসলে আব্দুস সামাদসহ তার দুই ছেলে স্ত্রী তাদেরকে মারপিট শুরু করে। অপূর্ব মন্ডলকেও গাছি দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
এ ঘটনার পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপূর্ব মন্ডলকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ছাড়া অর্জুন মন্ডলের ভারতীয় ভিসা থাকায় তাকে ভারতে নিয়ে আর্জিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অর্জুনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরে আসেনি। তার মাথায় দার কোপে মারাত্মক আঘাত হয়েছে বলে হাসপাতালে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
ঘটনায় শুক্রবার ঝিকরগাছা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অর্জুনের ভাই নকুল মন্ডল। অভিযোগের ভিত্তিতে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ আব্দুস সামাদ, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম, দুই পুত্র আলাউদ্দীন ও সালাউদ্দীনকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে অর্জুন মন্ডলের স্ত্রী লিপিকা মন্ডল জানান, আমার স্বামীর এখনও পর্যন্ত জ্ঞান ফিরেনি। কী অবস্থায় আছে তাও পাশে থেকে জানতে পারছি না। ওরা আমাদের অমানুষের মতো করে কুপিয়েছে এবং মেরেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
মামলার বাদী নকুল মন্ডল জানায়, ওরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে। দাদাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমরা উপস্থিত হওয়ার কারণে তা হয়নি। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার ও আসামিদের শাস্তি দাবি করছি। যাতে ওরা ভবিষ্যতে আর কারও প্রতি অন্যায় করতে না পারে।
ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই গনেশ মন্ডল জানায়, আব্দুস সামাদ ও তার পরিবারের লোকজন খুবই খারাপ। এলাকায় চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে তারা লিপ্ত থাকে। ওদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। আইনের মাধ্যমে ওদের কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
সাদিপুর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি রতন কুমার বিশ্বাস জানান, মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন আমাদের দাবি, তারা যেন আইনের আত্ততায় সর্বোচ্চ শাস্তি পায়।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত জানান, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তা মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে আসামিদের আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দিবেন মহামান্য আদালত।
এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যার পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন। তারা নিরীহ অর্জুন মন্ডলের পরিবারের ওপর হামলায় তীব্র নিন্দা ও আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত দুই শতাধিক মানুষ গণস্বাক্ষর দিয়েছে। যা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হবে। যাতে আইনের মাধ্যমে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম পিন্টু, নির্বাসখোলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গনেশ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার, সাদিপুর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি রতন কুমার বিশ্বাস, সাদিপুর বকুলতলা বাজারের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার মন্ডল, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ঝিকরগাছা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব উত্তম কুমার বিশ্বাস, যুগ্ন আহ্বায়ক প্রশান্ত কুমার প্রমূখ।
মেসেঞ্জার/আল আমিন