ছবি : মেসেঞ্জার
সরকারের পদত্যাগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো (২৮ অক্টোবর থেকে ৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত (৪১ দিনে) হরতাল ও অবরোধের নামে সিরাজগঞ্জে ৬টি পণ্যবাহি ট্রাক, দুটি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে, তাদের দেওয়া আগুনে ৭ হাজার ৫০টি বাচ্চা, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও গম বোঝাই ট্রাকে থাকা বিভিন্ন পণ্যসহ পুড়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুর মান্নান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত (৩১ অক্টোবর) জেলার রায়গঞ্জের চান্দাইকোনায় দাঁড়িয়ে থাকা গম বোঝাই একটি ট্রাক (৫ নভেম্বর) শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসের পাশে পণ্যবাহি ট্রাক, (২০ নভেম্বর) কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় একটি গম বোঝার্ই ট্রাক, (২৯ নভেম্বর) নলকা এলাকায় সবজি বোঝাই ঢাকা পিকআপে ও (৩ ডিসেম্বর) উল্লাপাড়ার নবগ্রাম এলাকায় করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলবাহী একটি কাভার্ডভ্যান, গত (২৮ অক্টোবর) রাতে চৌহালীর এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, গত (৫ নভেম্বর) ভোররাতে শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়ের বাদলবাড়ীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও গত (৬ ডিসেম্বর) রাতে শাহজাদপুরের টেটিয়ারকান্দা এলাকায় মুরগিবাহি গাড়িতে নাশকতামূলক ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এতে, জেলায় ৬টি পণ্যবাহি ট্রাক ও দুটি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুনের ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে মুরগির গাড়ি, গম বোঝাই ও কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহনে। ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
আগুন দেওয়া ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারদের সূত্রে জানা যায়, হরতাল ও অবরোধের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি বের করি। যদিও মালিক নিষেধ করে তার পরে বাহির হয়েছিলাম। বাড়িতে বউ বাচ্চা আছে, সংসার চালাতে হয়। ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট ভরবে না। শুধু পেটের দায়ে আমরা গাড়ি বের করার কারনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীরা আমাদের গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ট্রাকে ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এতে ট্রাকের ক্ষতির পাশাপাশি আমাদেরও মারপিট করছে তারা। গাড়িতে আগুন দেওয়ায় মালিকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এসকল অন্যায়ের হাত থেকে কবে মুক্তি পাবো আমরা।
ট্রাকে কিভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম থেকে সবজি বোঝাই মিনি ট্রাক নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে নলকা এলাকায় পৌঁছালে বেশ কয়েকজন গাড়ীর গতিরোধ করে। পরে আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। এসময় আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তারা আসার আগেই আগুনে ট্রাকটির কেবিন পুড়ে যায়। আগুনে পিকআপে থাকা সবজি নষ্ট হয়েছে। এঘটনায় আমি বাদি হয়ে মামলা করেছি।
মুরগির গাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়ে চালক মোখলেসুর রহমান বলেন, গত (৬ ডিসেম্বর) রাতে গাজীপুর থেকে মুরগির বাচ্চাবাহী একটি পিকআপ ভ্যান পাবনার দিকে যাওয়ার সময় পিকআপ ভ্যানটি উপজেলার দুর্গাদহ গ্যাস ফিলিং স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে আমাকে মারপিট করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। এতে পিকআপ ভ্যানে থাকা সাত হাজার ৫০টি মুরগির বাচ্চা পুড়ে মারা গেছে। পরে আমি বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুর মান্নান বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
গত ৪১ দিনে জেলায় ৬টি পণ্যবাহি গাড়ি ও দুটি আওয়ামীলীগ অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ট্রাকে থাকা বিভিন্ন পণ্য। এ আগুন নির্বাপন করতে জেলার ৯টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জনবল কাজ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।
যারা চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই চোরাগোপ্তা সঙ্গে জড়িতদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামীতেও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
মেসেঞ্জার/রাসেল/আপেল