ঢাকা,  শনিবার
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

জাতীয় অ্যাথলেটিকসের সেরা পুরুষ খেলোয়াড় গোলাম সরোয়ার

ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১৪, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

জাতীয় অ্যাথলেটিকসের সেরা পুরুষ খেলোয়াড় গোলাম সরোয়ার

ছবি : মেসেঞ্জার

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকোমরা গ্রামের গোলাম সরোয়ার ৪৭ তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নৌ বাহিনীর হয়ে শটপুটে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন। শুধু তাই নয় এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিকসের সেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে তার হাতে।

গোলাম সরোয়ার মাটিকোমরা গ্রামের আব্দুস সালাম হামিদা বেগমের পুত্র। তার নানার বাড়ি নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। অধিকাংশ সময় সে নানার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করত।

ছোট থেকে গোলাম সরোয়ারের খেলাধুলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল সহ সকল খেলায় সে পারদর্শী ছিল। গোলাম সরোয়ার বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। এক সময় যশোরের রাইজিং স্টার ক্লাবের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন।

যশোর প্রথম বিভাগ লিগে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ঢাকায় খেলার সুযোগ মিলেছিল তার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকায় তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেন ইস্ট এন্ড ক্লাবে। কিন্তু গোলাম সরোয়ারের নিয়তি যে লেখা অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে!

তাইতো ক্রিকেটের ২২ গজ ছেড়ে নিয়মিত অ্যাথলেটিকসের ফিল্ডে দেখা মেলে শটপুট হাতে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া ৪৭তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নৌ বাহিনীর হয়ে শটপুটে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন গ্রাম থেকে ওঠা গোলাম সরোয়ার। শুধু তাই নয় এবারের জাতীয় অ্যাথলেটিকসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে তার হাতে।

গোলাম সরোয়ার ক্রিকেটে ছিলেন পেস বোলার। মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে বড় ক্লাবে খেলার সুযোগ পাওয়াটা কঠিন ছিল তার জন্য। যে ক্লাবে খেলেছেন সেখানে নিয়মিত একাদশে থাকার সুযোগও মিলছিল না। তাছাড়া পরিবার থেকে ক্রিকেট খেলাকে সমর্থন করতো না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতেই পেয়ে যান বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর চাকরি।

মফস্বলে বেড়ে ওঠা গোলাম সরোয়ারের পরিবার সরকারি চাকরিকেই প্রাধান্য দিতে বলেন তাকে। এজন্য ২০১২ সালে নৌ বাহিনীতে চাকরি হতেই প্রিয় ক্রিকেটকে জানিয়ে দেন বিদায়।

ভাগ্যক্রমে অ্যাথলেট হয়ে ওঠা গোলাম সরোয়ারের। ঘটনাটি নিজেই বলেছেন, সৈনিকদের মনোবল বাড়াতে আন্তঃঘাটিতে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। শটপুটে মিটারের ওপর স্কোর করি। এই পারফরম্যান্স দেখে নৌ বাহিনী ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডে আনা হয় আমাকে। সেখান থেকেই এই খেলাটার শুরু হয়।

মূলত প্রতিযোগিতার জন্য শটপুটে হাতেখড়ি ২০১৪ সালে। বছর অনুশীলন করে প্রথমবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নেন ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৯ সালে জাতীয় সামার মিটে জেতেন রুপার পদক। কিন্তু ওই বছরই জাতিসংঘ মিশনে দক্ষিণ সুদান যেতে হয় সরোয়ারকে।

স্বাভাবিকভাবেই খেলাতে বিরতি পড়ে। মিশন শেষে দেশে ফেরেন ২০২০ সালে। ফিরে ২০২২ সালে সামার মিটে অংশ নিয়েই জেতেন সোনা। সেবার স্কোর করেন ১৪.২৩ মিটার। ওই বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্যই ১৩.৮৬ মিটার দূরত্বে গোলক ছুঁড়ে রুপা জেতেন। এরপর শনিবার করলেন ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। ১৪.৮৯ মিটার ছুঁড়ে রেকর্ড গড়ে জিতলেন সোনা।

এর আগে যে রেকর্ডটি ছিল এম ইব্রাহিমের। ২০১৯ সালে ১৪.৫৩ মিটার দূরত্বে গোলক নিক্ষেপ করে যে রেকর্ড গড়েন ইব্রাহিম। বছর পর সেটি এবার ভাঙলেন গোলাম সরোয়ার।

গোলাম সরোয়ারের আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড সালভেজের (সোয়াডস) সদস্য। ২০১৩ সালে করেছেন সীল কমান্ডো কোর্স। যারা স্থল, জল আকাশে সমানভাবে নিরাপত্তায় পারদর্শী।

গোলাম সরোয়ার আগে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু আপাতত শুধু খেলাতেই মনোযোগ, অনুশীলনে সময় বেশি ব্যয় করেন। এজন্য বিশেষায়িত ফোর্সের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে না।

জানালেন কবজির ব্যাথায় এবার সেরা পারফরম্যান্স করতে পারেননি। থ্রো করতে গিয়ে কবজিতে ব্যথা পেয়েছি। প্রথমবার যা করেছি সেটাই টপকাতে পারেনি কেউ। আমি ভালো সুযোগ সুবিধা পেলে ১৫ থেকে ১৬ মিটার থ্রো করতে পারব। এমন স্কোরে এসএ গেমসেও পদক আশা করতে পারি।

জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সেরা হওয়ার পর এখন গোলাম সরোয়ারের মতো অ্যাথলেটদের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী উন্নত প্রশিক্ষণ। তাহলে হয়তো এদের হাত ধরেই বাংলাদেশ পেতে পারে অবহেলিত ইভেন্টগুলোতে আন্তর্জাতিক পদক।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর থ্রো ইভেন্টের কোচ আনছার আহমেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের গোলাম সরোয়ার। এই অর্জনে কোচ আনছার আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গোলাম সরোয়ার।

মেসেঞ্জার/আলমগীর/আপেল