ছবি : মেসেঞ্জার
ঢাকার সাভারে মোবাইল হারানোর দ্বন্দ্বে আকাশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান আসামি হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সদৃশ্য মূর্তি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হৃদয় গ্রুপের প্রধান মো. হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয় (২৪), মো. আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান (২৩), নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু (৫২), মো. আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির (২৪), জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের (১৯), মো. জাকির হোসেন রনি (৩০), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ (৩৬) এবং আমির হামজা (২১)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। গত বছরের ৯ জুলাই মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে 'হৃদয় গ্রুপের' সদস্যরা 'পিনিক রাব্বি গ্রুপের' সদস্য আকাশ মাহমুদ নামের এক যুবককে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এছাড়া এ গ্রুপের সদস্যরা ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে এবং ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামে অন্য এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ড এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ৪-৫ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে 'হৃদয় গ্রুপ' পরিচালিত হয়ে আসছে। তাদের গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। গ্রেপ্তাররা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
এ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকি পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভার এলাকায় নির্মাণকাজে চাঁদাবাজি। প্রায়ই মাদকসেবন ও মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো বলে জানা যায়। গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে। পরবর্তী সময়ে ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর 'হৃদয় গ্রুপ' ও 'পিনিক রাব্বি গ্রুপের' সংঘর্ষে আকাশকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গ্রেপ্তাররা পূর্বশত্রুতার জের ধরে ছিনতাই করা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ আমজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর জখম করে সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া গিয়ার হৃদয় সাভার এলাকায় ৪-৫ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করে আসছিল। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতো এবং একই সঙ্গে গ্রুপেরও নেতৃত্ব দিতো।
গ্রেপ্তার হৃদয় সাভারের এনাম মেডিকেলের সামনে জনসম্মুখে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষে নিহত আকাশ হত্যা মামলার এক নম্বর পলাতক আসামি। এছাড়া হৃদয়ের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা ও ছিনতাইসহ ৬টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়
গ্রেপ্তার ড্যাগার আরিয়ান গিয়ার হৃদয়ের অন্যতম সহযোগী। সে এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য এলাকায় তাকে সবাই ড্যাগার আরিয়ান বলে চিনতো। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন ওরফে বাবা নাসু গিয়ার হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। সে গত ২১ মার্চ রাতে সাভারের সোবাহানবাগ এলাকায় আমজাদ হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, ছিনতাই, মারামারি ও হত্যাসহ ৪টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার আবিরুল ওরফে কাটা আবির, আমির হামজা ও জোবায়ের ওরফে পাইটু জুবায়ের সাভারের অন্যতম ত্রাস সৃষ্টিকারী হৃদয় গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তার জাহিদুল হৃদয় গ্রুপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করতো বলে তাকে সবাই গ্রুপটির উপদেষ্টা বলতো। সে কষ্টি পাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সাথেও জড়িত।
এছাড়াও সে বিভিন্ন ব্যক্তিদেরকে ভূয়া পাথরের মূর্তি দেখিয়ে, কষ্টি পাথর বিক্রির কথা বলে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিত। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় ৬-৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার জাকির হোসেন রনি ওরফে মেশিন রনি হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়ের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করে এবং এই অস্ত্র বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাড়ায় প্রদান করতো। সে আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়ায় প্রদান করায় তাকে সবাই মেশিন রনি হিসেবে চিনতো। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।
মেসেঞ্জার/নোমান/আপেল