![বৈশাখের তাপদাহে পুড়ছে বগুড়া, অতিষ্ঠ জনজীবন, বাড়ছে বিভিন্ন রোগ বৈশাখের তাপদাহে পুড়ছে বগুড়া, অতিষ্ঠ জনজীবন, বাড়ছে বিভিন্ন রোগ](https://www.dailymessenger.net/media/imgAll/2024February/32-2404181615.jpg)
ছবি : মেসেঞ্জার
বৈশাখের প্রচন্ড খরতাপে পুড়ছে বগুড়া। চৈত্র্যের পর বৈশাখের খরাতাপে রোদের তাপমাত্রা ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আর এতে করে সবচেয়ে দূর অবস্থায় পড়েছে শিশু ও শ্রমজীবী মানুষ। এ ভ্যাপসা গরমে নানা রোগ-ব্যাধির সংক্রমন বেড়েছে।
এ প্রচন্ড গরমে চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওযা শ্রমজীবিরা। টানা তাপদাহে পুড়ছে এ অঞ্চলের মাঠ-ঘাট। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। মাঝে মধ্যে আকাশে কালো মেঘের আবরণ হলেও তা ঝরছে না। তাই এক পশলা বৃষ্টির জন্য তীথের কাকের মতো অপেক্ষা সকলের।
মূলত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি থাকার কারণে পরিস্থিতি এমন হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গরমে সকলকে বেশী করে পানি পান করার এবং শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি বেশী নজর রাখার পরামর্শ। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) জেলায় সবোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.০১ ডিগ্রি সে:।
ছয় ঋতুর দেশে বাংলাদেশ। বর্ষা ঋতুর আগে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস বৈশাখ মাসেও তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে রোদের তাপমাত্রা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে ঘরে এবং বাইরে সকল প্রকার মানুষ ও পশু পাখি দূভোগে পড়েছে। আর গ্রীস্মের তাপদাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ যাওয়া আসা বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন উচ্চবিত্তশালীদের এসি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারাও এ ভ্যাপসা গরমে চরম বিপাকে পড়েছে।
আর যাদের গরম থেকে রক্ষার জন্য বৈদ্যুতিক ফ্যান আছে তা দিয়েও এ ভ্যাপসা গরম নিবারণ করতে পাচ্ছেন না অনেকেই। তাই এ প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে সকল শ্রেণীর মানুষ এবং পশুপাখি চরম অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ ভ্যাপসা গরমে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সংক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এ গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রমন হয়ে পড়ছে।
বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার রিক্সা চালক ফারুক হোসেন ও বেলাল উদ্দিন বলেন, বৈশাখ মাসে প্রচন্ড গরম পড়েছে তাতে আমরা রিক্সা চালাতে পারছি না। একটু রিক্সা চালায় গরমে সারা শরীর থেকে প্রচান্ড ঘাম ঝড়ে। তখন শরীরে দুর্বল হয়ে আসে। তখন আর রিক্সা টানতে ভালো লাগে না।
বিসিক এলাকার ফান্ডডী শিল্পে কর্মচারী আব্দুল মান্নান ও জহুরুল ইসলাম বলেন, চৈত্যে মাসের খরার পর বৈশাখ মাসে বেড়েছে। গত কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও আকাংখিত বৃষ্টি না হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে যে হারে গরম পড়েছে তাতে ফ্যান দিয়েও কাজ করা অসহ্য হয়ে পড়েছে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও টেকা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ্যাড, নাসিমুল করিম হলি জানান, প্রচন্ড গরমে শরীর ঘেমে সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। এতে করে শরীর অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জ¦র, সর্দি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। রোজা রেখে প্রচন্ড গরমের কারণে বিকেলে ক্লান্তবোধ হয় এবং পানির পিপাসা লাগে।
শহরের মেরিনা মার্কেটের ব্যবসায়ী রেজাদুল হক রেজা ও মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, এ প্রচন্ড রোদেও তাপে শরীর ও মন দুটোই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এ গরমে যখন ফ্যানের বাতাস দিয়ে নিবারণ হয় না। তাই এসি চালায়। কিন্তু যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন দুররুহ উঠে জীবন।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামির হোসেন মিশু জানান, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুদের ডায়রিয়া, জর, কাশি,সর্দ্দি এসব রোগে সংক্রমন হতে পারে। তবে, এখনও পর্যন্ত গরমের কারণে তেমনটা আক্রান্ত হওয়া কোন সংবাদ আমরা পায়নি।
সেজন্য এ গরমে শিশুদেরকে একটু বাড়তি যত্ন রাখতে হবে এবং ছায়াযুক্ত স্থানে শিশুদের রাখতে হবে। সকলকে বেশী বেশী করে পানি পান করাতে হবে। কোন রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্ট্রোক করার সম্ভাবনা বেশী থাকে। সেই সাথে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এসব রোগ হতে পারে। সেজন্য এ গরমে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ জানান।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস’র সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বগুড়ার তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার সকাল ৬ টায় ২৬.৫ সেন্টিগ্রেড সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিকেল ৩ টায় সর্বোচ্চ ৩৭.০৭ সেন্টি গ্রেড তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। মঙ্গলবার বগুড়ায় চলতি মৌসুমের সবোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.০৫। বৃহস্পতিবার জেলায় ৩৭.০১ ডিগ্রি সে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে যে কোন সময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মেসেঞ্জার/আলমগীর/তারেক