ফাইল ছবি
শরীয়তপুর সদরের ডোমসার এলাকায় রাবেয়া আক্তার নামে আড়াই বছরের শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সৎবাবার বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এঘটনায় শিশুটির সৎবাবা মঞ্জুরুল আলমকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয় বছর আগে কুমিল্লা জেলার রুনা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় গাইবান্ধা জেলার রিকশা চালক রাশেদুলের। তাদের বিবাহিত সংসার জীবনে দুইটি মেয়ে সন্তান। তারা ঢাকার মধ্যবাড্ডা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। কয়েকমাস আগে রুনা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে চট্রগ্রামের টিউবওয়েল শ্রমিক মঞ্জুরুল আলমের সঙ্গে। গত ১৭ দিন আগে তারা পালিয়ে বিয়ে করে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার এলাকায় চলে আসেন। সেখানে নিহত শিশু রাবেয়াকে নিয়ে স্থানীয় মো. এসকেন্দারের বাসায় ভাড়া থাকতেন ওই দম্পতি।
সৎ মেয়ে রাবেয়া কান্না ও প্রস্তাব-পায়খানা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৮ থেকে ১০ দিন আগে ডোমসারের ওই বাসাতে রাবেয়াকে হাত-পা বেধে শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতন করে সৎ বাবা মঞ্জুরুল আলম। এতে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাবেয়াকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে তার মা রুনা আক্তার। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। তাকে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় রুপালী বেগম বলেন, সৎবাবা শিশুটিকে অনেক অত্যাচার ও মারধর করছে। শরীরে মারধরের অনেক দাগ দেখেছি। হাসপাতালে যখন আনা হয়েছে তখন শিশুটি অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিশুটিকে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। যার জন্য শিশুটির মৃত্যু হলো তার বিচার হওয়া উচিৎ।
নিহত রাবেয়া আক্তারের মা রুনা আক্তার বলেন, আমার দ্বিতীয় স্বামী মেয়েটিকে মারধর করেছে। কাল রাতেও অনেকটা ভালো ছিল। আজ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি একজনের থেকে ১০০ টাকা ধার করে মেয়েকে সকালে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। কিন্তু বিকেলে মেয়েটি মারা যায়। আমি মেয়েকে আর পাব না।
সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিপ্রা মন্ডল বলেন, ভর্তির পর থেকেই শিশুটির অবস্থা খারাপ ছিল। শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসকরা জন্য ঢাকাতে রেফার করেছিল। কিন্তু শিশুটিকে ঢাকা নেয়া হয়নি। বিকেলে শিশুটা মারা যায়।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া শিশুটির শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরও ছিল। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে রেফারও করি। কিন্তু তাকে নেয়া হয়নি। যেহেতু শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়, তার জন্য ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৎ বাবা শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। শিশুটির সৎবাবাকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছেন।
মেসেঞ্জার/হাওলাদার