ছবি : মেসেঞ্জার
রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলার প্রকৃতিতে সবুজ পাতার ফাঁকে সোনালী সৌন্দর্য্যরে রং ছড়াচ্ছে সোনাঝরা বিলুপ্তপ্রায় সোনালু ফুল। তীব্র তাপদাহের মাঝেও সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে সোনালু ফুল প্রকৃতিতে মেলে ধরেছে তার আপন রং।
গাছে ফোঁটা অপরুপ সৌন্দর্য খরতাপে চলতি পথে পথিকের নজর কেড়েছে। উজ্জল হলুদ বরণ এ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর প্রকৃতি প্রেমীদের যেন মিলন মেলা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মনে করেন, সোনালু গাছ গাছগুলো প্রাকৃতিকভাবে জন্ম ও বড় হয়। বেড়ে ওঠার সময় তেমন চোখে না পড়লেও ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সবার মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। তাই কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসা অসংখ্য ঔষুধি গুনে ভরপুর এ গাছটি সংরক্ষণ ও রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজবাড়ীÑফরিদপুর মহাসড়কের পাশে শ্রীপুর এলাকায় সড়ক ভবনের প্রবেশে সোনালুর ‘সোনালী অভ্যর্থনা’য় মুগ্ধ হচ্ছেন অফিসের কর্মমূখী মানুষ, যানবাহনের চালকরা ও সড়কে চলাচলরত পথচারীরা।
সোনালু গাছের শাখা ছাপিয়ে ঝুমকার মত ঝুলে আছে উজ্জ্বল হলুদে ফুলগুলো। অনেকটা সোনার চেইনের মতো দেখতে হলুদ সোনালুর অপরূপ শোভা মন ছুঁয়ে যাবে যে কারোই।
ফুলগুলোর ফাকে ফাকে ঝুলছে লম্বা লাঠির আকৃতির ফল। গ্রীষ্ম রাঙানো এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি তার নামের বাহার- সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
ফুলের সৌরভ আর মন মাতানো রঙে আকৃষ্ট হচ্ছেন চলাচলকারীরা। প্রকৃতি প্রেমীরা সড়কের পাশে গাড়ি থামিয়েই ও পথচরারী দাড়িয়ে সোনালী সৌন্দর্য ফ্রেমে বন্দি করতে তুলছেন ছবি।
জানা গেছে, সোনালু ফুল পত্রঝরা উদ্ভিদ। সাধারণত সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিক ভাবে। মাঝারি আকৃতির বৃক্ষটির উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট হয়ে থাকে। অপরুপ শোভা দানকারী সোনালু ফুল বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুটে।
প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলি সম্পন্ন এই গাছ বেশির ভাগই বেড়ে ওঠে অযত্ন-অবহেলায়। এর ফুলে পাপড়ি পাঁচটি। এটির পুংকেশর দশটি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়।
বৃক্ষটির ডালপালা ততটা ছড়ানো নয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ, মসৃণ ডিম্বাকৃতির। তবে প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই। এক সময় উপজেলার বন বাদারে, গ্রামীণ রাস্তার ধারে, পরিত্যক্ত জমিতে প্রায় সর্বত্রই সোনালু গাছের দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
একই ভাবে প্রকৃতিতে পর্যায়ক্রমে বকুল, হৈমন্তী/কুরচি, সোনালু, রাধাচূড়া, কেছিয়া, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, করবী, জারুল, কদম, পলাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ তাদের সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে।
রাজবাড়ীর সিনিয়র সাংবাদিক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, এক সময় গ্রাম-বাংলার পথে-প্রান্তরে হামেশাই সোনালু গাছের দেখা মিললেও এখন বৃক্ষটি দেখতে চাইলে খুঁজে বের করতে হয়। প্রকৃতির এ বৃক্ষটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
এমন সময়ে রাজবাড়ী সড়ক ভবন প্রবেশ পথে গাছটি থাকায় নতুন প্রজন্ম চলাচলের সময় এই গাছটির সম্পর্কে জানতে পারছে। আর হলুদের সমারোহ বলে এটি যেন প্রকৃতির উষ্ণ অভ্যর্থনা।
পথচারী ডাঃ গোলাম লোহানী বলেন, মহাসড়কে চলার সময় চোখ আটকে যায় রাজবাড়ীর সড়ক ভবনে। ভবনের সামনে সোনালু ফুলের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। বৈশাখের শেষ সপ্তাহে প্রকৃতিকে হলুদ রঙে রাঙাচ্ছে সোনালু।
বিষয়টি দারুণ! হলুদ রঙের বাহারি শোভা ছড়িয়ে ঝুলে থাকা ফুলের সৌন্দর্য চলতি পথের যে কাউকেই মোহিত করে। গ্রামাঞ্চলে গাছটি কোথাও কোথাও দেখা গেলেও শহর নেই বললেই চলে।
কবি সালাম তাসির ও রাজ্জাকুল আলম রাজু বলেন, সোনালু গাছ সাধারণত অযত্নে অবহেলায় নিরবে বেড়ে ওঠে। যখন ফুল ফোটে তখন কারো সাধ্য নেই এই গাছকে দৃষ্টি না দিয়ে এড়িয়ে যাবার।
বেড়ে ওঠার সময় তেমন দৃষ্টিতে না পড়লেও ফুল ফোটার পর দেখে সবার মন-প্রাণ প্রশান্তিতে ভরে যায়। এ শোভাবর্ধনকারী গাছটি আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গাছটির বংশ বিস্তার বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন।
সৌখিন ফটোগ্রাফার সুজন বিষ্ণু বলেন, অটোরিক্সা যোগে স্ত্রীকে নিয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে আলীপুর বেড়াতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে যায় শ্রীপুরের সড়ক ভবনের সোনালু সৌন্দর্য্য। হলুদ বরণ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে সান্নিধ্য পেতে গাড়ী থেকে নেমে কিছু ছবি তুলে সংগ্রহে রেখে দিলাম।
রাজবাড়ীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাছটি অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে ও বাণিজ্যিক ফল উৎপাদন নেই বিধায় কৃষক পর্যায়ে এর গুরুত্ব কম।
তবে এ ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আগামী নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে তা সংরক্ষণ করা অতি প্রয়োজন। না হয় বিলুপ্ত প্রায় এ গাছটি কালক্রমে হারিয়ে যাবে আমাদের মাঝ থেকে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তুষার আহম্মেদ বলেন, সোনালু গাছটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শোভা বর্ধণকারী গাছটির অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিনেই ভীড় জমায় পথচারীরা। প্রতিটি গাছ প্রকৃতিকে উজার করে দেয় তার সৌন্দর্য্যের ফুল ও ফল, তেমনি আমাদেরও গাছ রোপনের মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
মেসেঞ্জার/মাহফুজুর/তারেক