ছবি : মেসেঞ্জার
দুই সহোদর ভাইয়ের প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নারায়নগঞ্জ সদর থানার ডিআইটি রোডের বাসিন্দারা। এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার পাশাপাশি তাদের মায়ের সঙ্গেও প্রতারণা করতে ছাড়েননি নাজমুল হক রাজু ও সাজেদুল হক সাজু নামের এ দুই ভাই। অন্তত এক ডজনের বেশি মামলায় তারা একাধিকার গ্রেপ্তারও হয়ে জেল হাজতে থেকেছেন। কিন্তু জামিনে বের হওয়ার পরও তাদের প্রতারণা থামেনি। নারায়নগঞ্জ সদর থানার ডিআইটি রোডের বাসিন্দারা তাদের এখন প্রতারক হিসেবেই চেনে।
সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর মুগদা এক নারী ও তার মেয়েকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজু। একই মামলায় তার ভাই সাজুও এই মামলার আসামি। তবে পুলিশ এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জানা যায়, জমি জালিয়াতি করে অন্যত্র বিক্রি করার দায়ে নাসিমা বেগমের তার এই দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতেও ছিলেন। বর্তমানে আদালতে মামলাটি চলমান। দোকান ভাড়া দেয়ার নামে লাজফার্মা কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয় সাজু। পরে দোকান ভাড়া না দিয়ে আত্নসাৎ করেন। গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর মুগদা থানা এলাকায় টাকা পয়সা পাওনার বিরোধের জের ধরে তাহমিনা নামের এক নারী ও তার মেয়েকে এসিডে ঝলসে দেয় তারা। অপহরণে ব্যর্থ হয়ে তারা প্রকাশ্যই এসিড ছুঁড়ে মারে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মুগদা থানায় মামলা হলে রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার অন্য আসামি সাজুসহ তার সহযোগীরা এখনো ধরা পড়েনি।
রাজধানী ঢাকাসহ নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন থানা আদালতে এ রকম প্রতারনার করার জন্য ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের পিতা মাতার কিছু জায়গা জমি রয়েছে। মূলত এই জায়গা জমিকে পূঁজি করেই তারা প্রতারণা করে থাকেন। একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে টাকা পয়সা নেন। তারা যখন জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার কথা বলে তখন আর তারা দেননা। জমির মূল্যস্বরুপ দেয়া টাকাও ফেরতও দেয়না। যখনই টাকা ফেরতের কথা বলে তখন সাজুর স্ত্রী মারিয়াকে ব্যবহার করে। তার স্ত্রীকে দিয়ে ধর্ষণের মামলা দেয়ার হুমকিও দেয়। এই মারিয়ার ভাই তামিম নারায়নগঞ্জের একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কার্যকালাপের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
তারা জানান, রিয়াজ সুপার মার্কেটের জায়গা নিয়ে বহু লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এই পরিবারটি। বিক্রির নাম করে টাকা নিয়ে আত্নসাৎ করেছে। এদের প্রতারণা হাত থেকে রেহাই পাননি খোদ সিটি নারায়নগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলরও। ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশের নিকট অভিযোগ করে সাজুর স্ত্রী মারিয়া। পরবর্তীতে সেটি তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়।
আরিফুর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ডিআইটি রোড এলাকায় রাজু সাজু নাম বললেই সবাই চেনে। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকালাপ, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে বহু মামলা রয়েছে থানায়। বর্তমানে পরিবারটি বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ভুক্তভোগীরা কোন কিছু বললেই উল্টো তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে হয়রানী করে। এলাকায় প্রতারক পরিবার হিসেবে সবাই এখন তাদের চেনে।
বর্তমানে এমন পরিস্থিতি এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করছে। নারায়নগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ সত্য। মামলাও রয়েছে। বর্তমানে কোন ভুক্তভোগী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আসলে মামলা নেয়া হবে।
রাজধানীর মুগদা থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় থানায় মামলা আছে। আমরা রাজু নামের একজনকে গ্রেপ্তারও করেছি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মেসেঞ্জার/দিশা