মোছা. বিলকিস। ফাইল ছবি
গাজীপুরের কালীগঞ্জের পূর্বাচলে ঘুরতে নিয়ে মোছা. বিলকিস (২৬) নামের এক নারীকে গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন তারই স্বামী মিজানুর রহমান সুমন (২৮)। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বুধবার (২২ মে) রাজধানীর র্যাব–১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নটির অধিনায়ক (সিও) মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ।
এর আগে কালীগঞ্জের পূর্বাচলের ২৪ নং সেক্টরে গত রোববার (১৯ মে) বিকেল ৪টার দিকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে বিলকিসকে পুড়িয়ে হত্যা করেন সুমন।
গাজীপুর–টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব–১। সুমন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মফিজুল ইসলামের ছেলে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর তুরাগের রানাভোলা এলাকায় বসবাস করেন। উবারে গাড়ি চালান তিনি।
র্যাব–১–এর অধিনায়ক মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, তুরাগের রানাভোলা এলাকায় স্ত্রী শিমু, দেড় বছরের শিশু মেয়ে ও মাকে নিয়ে বসবাস করতেন সুমন। ওই এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি ও স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন বিলকিস। একই এলাকার হওয়ায় সুমন ও বিলকিসের মধ্যে পরিচয় হয়। এরপর মোবাইল ফোনে সখ্য গড়ে ওঠে। দেড় বছর আগে গোপনে বিলকিসকে বিয়ে করেন সুমন। বিলকিস আগের স্বামীকে ছেড়ে সুমনের সঙ্গে সংসার শুরু করেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বিয়ের কিছু পর থেকেই তাঁদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়েও মনোমালিন্য শুরু হয়। সুমন দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে সপ্তাহে মাত্র একদিন থাকতেন। আবার মাঝে মধ্যে তাঁরা ঘুরতে যেতেন।
হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিনায়ক মোসতাক আহমদ বলেন, সুমন উবারে গাড়ি চালিয়ে অর্ধেক দিতেন গাড়ির মালিককে। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে দুটি সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। সম্প্রতি বিলকিস সুমনের কাছে আগের থেকে কিছু বেশি টাকা চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কলহ শুরু হয়।
মোসতাক আহমদ বলেন, এর জেরেই বিলকিসকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সুমন। সে অনুযায়ী উবারের গাড়িতে করেই ঘুরতে পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে চা পান করেন আর হত্যার জন্য সুবিধাজনক জায়গা খুঁজতে থাকেন। পরে একটি জঙ্গলে গাড়ি ব্রেক করে নেমে পাইপ দিয়ে ট্যাংক থেকে বোতলে পেট্রল ভরেন সুমন। ওই সময় বিলকিস গাড়িতেই বসা ছিলেন। গাড়ির ইঞ্জিন তখনো চালু ছিল।
কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোতলের পেট্রল তাঁর গায়ে ছিটিয়ে দেন সুমন। এরপর সঙ্গে থাকা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে বিলকিসের গায়ে ছুড়ে মারেন। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলে সুমন গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। বিলকিস বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। পাশের একটি ড্রেনে ঝাঁপ দেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার (২০ মে) সকাল ৯টার দিকে মারা যান বিলকিস।
র্যাবের সিও মোসতাক আহমদ বলেন, এ ঘটনায় র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে গাজীপুর থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইল ফোনও ফেলে দিয়েছিলেন সুমন। তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কালীগঞ্জ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মেসেঞ্জার/হাওলাদার