ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

শতাধিক শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্ন ধ্বংস করেছেন এক অধ্যক্ষ

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ৩০ মে ২০২৪

শতাধিক শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্ন ধ্বংস করেছেন এক অধ্যক্ষ

ছবি : মেসেঞ্জার

শিক্ষার্থী ও অবিভাবককে না জানিয়ে গোপনীয়তার সাথে নিজ মাদরাসায় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি আবেদন সম্পন্ন করেছেন মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী নামে এক অধ্যক্ষ। এই অনিয়ম তিনি দীর্ঘ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অবিভাবকগণ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থী চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী এ লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার "করিমজান মহিলা কামিল (এম,এ) মাদরাসা" এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। যার ইআইআইএন ১০১৪১২, মাদরাসা কোড ১৬৮৯৭, কেন্দ্র কোড ৫৫৬। ভুক্তভোগী ওই পাঁচ শিক্ষার্থী চরফ্যাসন উপজেলার স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে সদ্য দাখিল পাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, 'মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী আমাদের বাড়িতে এসে আমার কছে আমার দাখিল পরীক্ষার রোল নম্বর, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর চেয়েছেন। কিন্তু আমি কোন তথ্য দেইনি। আমি ২৮ মে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি আবেদন করতে গেলে জানতে পারি যে, আমার ভর্তি আবেদন সম্পন্ন করা। পরে জানতে পেরেছি আমার আবেদন তার মাদরাসা থেকে সম্পন্ন করেছে। অথচ এ বিষয়ে আমার কিংবা অভিভাবকের অনুমতি নেননি। আমার এসব গোপনীয় কাগজপত্রতো আমার মাদরাসায় সংরক্ষিত থাকার কথা। তাহলে তার হাতে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিভাবে গেল? তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।'

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শ্রেণীর ভর্তি আবেদন শুরুর দিন থেকে শিক্ষার্থী ও অবিভাবককে না জানিয়ে গোপনীয়তার সাথে নিজস্ব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে উক্ত মাদরাসা প্রথম পছন্দ তালিকায় নির্ধারণ করে ভর্তি আবেদন করেছেন মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী। এই শিক্ষার্থীর মতো শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি আবেদন একইভাবে সম্পন্ন করেছেন তিনি। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. জাহের দালাল বলেন, 'সদ্য দাখিল পাশ করা শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন মাদরাসা থেকে। ভর্তি আবেদন শুরুর আগেই বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ নথিও চলে গেছে তার হাতে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়েও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন ওই অধ্যক্ষ। তার প্রাধান উদ্দেশ্য শিক্ষার্থী ও অবিভাবককে না জানিয়ে গোপনীয়তার সাথে তার মাদ্রসায় ভর্তি করানো। যার ফলে কোন শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার কাঙ্খিত স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায় নিমিষে। এভাবেই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর।'

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থীর বাবা মো. সিরাজ বলেন, 'আমার মেয়ে ২০২৩ সালে দাখিল পাস করে। ওই সালেই মেয়ের ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখি তার আবেদন সম্পন্ন করা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী তার মাদরাসার নাম প্রথম চয়েসে দিয়ে আমার মেয়ের ভর্তি আবেদন সম্পন্ন করেছেন। এমনকি আমাদের কারো মোবাইল নম্বর ওই আবেদনে ব্যবহার করেনি। ভর্তি আবেদন বাতিলের জন্য তার কাছে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চাইলে তিনি দেননি। নিরুপায় হয়ে অন্য প্রক্রিয়ায় আমার মেয়ের ওই আবেদন বাতিল করে পছন্দের কলেজে ভর্তি করাই। এতে আমি অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হই। আমার মতে অভিভাবকদের পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দ-অপছন্দের থাকতেই পারে। আমার সন্তানের কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যত গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণের অধিকার আমাদের আছে। এ সিদ্ধান্ত আমার নিবো।'

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা জানতে বুধবার (২৯ মে) সকালে উক্ত মাদরাসা গিয়ে দেখা যায় যে, মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষার্থীর দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের ফটোকপির ভিন্ন ভিন্ন বান্ডিল তার নিজস্ব টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করেন এক শিক্ষার্থীর তথ্য জানাতে। এসময় শতাধিক শিক্ষার্থীর দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের কপিও সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মোঃ ইয়াকুব আলী কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। কৌশলে এ বিষয় এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক কে মুঠোফোন জানালে তিনি বলেছেন, 'আমি অফিসের বাইরে আছি। অভিযোগপত্রটি অফিস থেকে রিসিভ করিয়ে নেন। আমি এসে দেখে ব্যবস্থা নিবো।'

মেসেঞ্জার/সাইফুল/আজিজ

×
Nagad