ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

হবিগঞ্জে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, কয়েকশো পরিবার পানিবন্দী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৯ জুন ২০২৪

হবিগঞ্জে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, কয়েকশো পরিবার পানিবন্দী

ছবি : মেসেঞ্জার

টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জ জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। খোয়াই নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হবিগঞ্জ শহরের মানুষের মধ্যে বাঁধ ভাঙার আতংক থাকলেও বুধবার (১৬ জুন) বিকেলে থেকে তা কমতে শুরু করেছে। যদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এজন্য প্রশাসনও রয়েছে নানা প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হবিগঞ্জ কার্যালয় থেকে বেলা ৩টায় দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে- খোয়াই নদী বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কালনী-কুশিয়ারা নদী বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলি পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার ও আজমিরীগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) থেকে টানা বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগে পড়েছেন অনেক বাসিন্দা। এর মধ্যে খোয়াই নদীর পানি শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবার খবরে আতংকে রয়েছেন শহরবাসী। বুধবার (১৯ জুন) বেলা ১টার দিকে শহরতলীর জালালাবাদ গ্রামের দিকে একটি অস্থায়ী খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

জালালাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শামসুল হুদা বলেন- বেলা ১টার দিকে জালালাবাদ গ্রামে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসল ও মৎস্য খামারের ক্ষতি হয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার শতমুখা, সুজাতপুর সহ প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে শহরের চৌধুরীবাজার খোয়াই নদের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- নদে পানির তীব্র স্রোত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধে বসবাসকারী লোকজন খুবই আতংকে রয়েছেন। বাঁধের বাড়িঘর ও দোকানপাট সরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে।   

পানি উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন- টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খোয়াই নদের পানিও বেড়েছে। তবে বিকেলের দিকে পানি কমতে শুরু করেছে। জালালাবাদ এলাকায় একটি অস্থায়ী বাঁধ রয়েছে। সেটি ভেঙে হাওরের দিকে খোয়াই নদের পানি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে শহরবাসীকে আতংকিত হওয়ার মত অবস্থা তৈরি হয়নি। 

তারপরও পাউবোর স্বল্প জনবল নিয়ে আমরা বাঁধ রক্ষার জন্য প্রস্তত রয়েছি। ৬ হাজার জিও ব্যাগ আমাদের কাছে মজুদ আছে- বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানানো হয়- বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলার ৯ উপজেলায় ৮৮টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রসমূহে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম গঠন করার জন্য সিভিল সার্জন হবিগঞ্জকে অনুরোধ করা হয়েছে।  

৯ উপজেলা ও ৬ পৌরসভায় ৪২০ মেট্রিক টন জিআর চাল উপ-বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় প্রায় ১৭১ মেট্রিক টন চাল, জিআর ১ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৭৮ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরি বাবদ ২ লাখ ৩৪ হাজার  টাকা মজুদ আছে।

জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা বলেন- জরুরি উদ্ধার কাজের জন্য উপজেলাভিত্তিক ভলান্টিয়ার ডাটাবেজ করা হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি সভা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে উদ্ধারকার্য পরিচালনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌকা এবং মাঝিকে প্রস্তুত রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মেসেঞ্জার/পাবেল/তারেক

×
Nagad