ঢাকা,  শনিবার
২৯ জুন ২০২৪

The Daily Messenger

যশোর সিটি হাসপাতাল যেন প্রতারণার ফাঁদ!

যশোর প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৬ জুন ২০২৪

যশোর সিটি হাসপাতাল যেন প্রতারণার ফাঁদ!

ছবি : মেসেঞ্জার

যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সিটি হসপিটালে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চিকিৎসাসেবার নামে রীতিমতো প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে।

দালালের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা রোগীরা হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে ন্যায্য চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে অপচিকিৎসায় রোগীর প্রাণ ঝরে যাচ্ছে।

সিজারের পর কাজল (২৬) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার (২৬ জুন) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে, চিকিৎসক ছাড়াই রোগীদের প্যাথলজি রিপোর্ট দেয়ার অপরাধে বিগত দিনে জরিমানাও গুনতে হয়েছে সিটি হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী কাজলকে সোমবার (২৪ জুন) রাত ১০ টার দিকে সিটি হসপিটালে সিজার করা হয়। অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার ফারজানা পারভীন। অজ্ঞানের চিকিৎসক ছিলেন ডা. আহসান কবির বাপ্পি।

সিজারের পর রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোরে প্রসূতি কাজল মারা যান। ঘটনায় তার স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে হসপিটালের সামনে বিক্ষোভ করেন।

সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান করণিক পারভীন জানান, সিটি হসপিটালে সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সিভিল সার্জনের নির্দেশে বুধবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা, মীর আবু মাউদ।

বাকি দুইজন হলেন- অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী কনসালটেন্ট ডা. শারমিন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ রনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়াদউত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে সিটি হসপিটালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চিকিৎসা সেবায় সরকারি কোন নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। ব্যবসা জমজমাট করতে বিভিন্ন গ্রামে সিটি হসপিটালের ভাড়াটিয়া নারী দালাল রয়েছে। তাদের কাজ হলো রোগী বা স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে সিটি হসপিটালে নিয়ে আসা। বিনিময়ে তারা কমিশনের টাকা পান।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অনিয়ম, অনুমোদন বিহীন হসপিটাল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন কার্যক্রম চালানো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদের নেতৃত্বে সিটি হসপিটালে অভিযান চালানো হয়। এসময় কনসালটেন্ট চিকিৎসক ছাড়াই রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার অপরাধে সিটি হসপিটালের প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করে।

অভিযানে সিটি হসপিটালে রোগীর স্বজনদের ঠকিয়ে ভুয়া প্যাথলজি রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের সত্যতা মেলে।

বিষয়ে সিটি হসপিটালের পরিচালক আব্দুল্লাহ জনি জানান, সিজারে কোন ত্রুটি ছিলনা। স্বজনেরা সঠিক সময়ে রক্ত ম্যানেজ করতে না পারায় কাজলের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে জেনারেল হাসপাতালে পাঠালে মারা যান।

তিনি আরও জানান, দালাল দিয়ে কোন ভাগিয়ে আনার অভিযোগ সঠিক নয়। বর্তমানে প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। হালনাগাদ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, আগামী কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যুর সত্যতা মিললে চিকিৎসক সিটি হসপিটালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিভিল সার্জন জানান, তিনি এখানে যোগদান করার পর থেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করতে সব ধরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মনীতি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। চিকিৎসা সেবার ফাঁদ পেতে রোগীদের সাথে প্রতারণার সুযোগ দেয়া হবে না।

মেসেঞ্জার/বিল্লাল/আপেল

Advertisement