ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৪ জুলাই ২০২৪

The Daily Messenger

সাতক্ষীরায় সড়কের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩১, ১ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ২১:৩২, ১ জুলাই ২০২৪

সাতক্ষীরায় সড়কের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

সাতক্ষীরায় সড়কের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার (১ জুলাই) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট মোড় থেকে অভিযান শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।  সাতক্ষীরা শহর থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার সড়কের ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলবে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযানে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

এদিকে ইটাগাছা এলাকার খোকন বিশ্বাসসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, পূর্বে কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। রাস্তার পাশে থাকা একটি স্কাভেটর মেশিনও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মেশিনটি হস্তান্তরযোগ্য হলেও কোন সুযোগ না দিয়ে ভেঙে দেওয়ার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। এছাড়া রাস্তার ধারে বসবাসকারী গরিব মানুষ গুলো দুর্ভোগে পড়েছেন। এমনকি ঘরে থাকা খাবারগুলোও সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

ইটাগাছা এলাকার  রেশমা নামে এক নারী বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এ স্থানে বসবাস করছি। আমাদের ভিখারি করে দিয়েছে এই সড়ক জনপদ বিভাগ। শেষ পর্যন্ত রাস্তার ফকির করে ছাড়লো আমাদের।

তিনি আরও বলেন, আমরাও চাই রাস্তা বড় হোক। আমাদের তো নিজস্ব কোন জায়গা নেই। বাপ দাদার আমাল থেকে এখানে বসবাস করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা পৌর কাউন্সিলর ও জেলা প্রশাসকের কাছে ঘরের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন আপনাদের ব্যবস্থা করে তার পর উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। কিন্তু তা হলে কই। এখন বৃষ্টির সময় আমরা কোথায় যেয়ে থাকবো।

সাতক্ষীরা শহরের ছফুররুননেসা মহিলা ডিগ্রী কলেজের পাশে বহু বছর ধরে  তিন ছেলে নিয়ে বসবাস করেন জামের আলীর। তার একটু পাশে ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে মাঠের ধারে নাতনিকে নিয়ে বসে ছিলেন জামের আলী। অসুস্থ জামের আলী ছাতি হাতে নিয়ে বসে আছেন আর ৫ বছর বয়সী মীম পাশে কান্না করছেন। এখানে বসে আছেন কেন শুনতে চাওয়া মাত্র কান্না করে বলে উঠলেন, পথে বসে গেছি। এই ছোট বাচ্ছা নিয়ে কোথায় যাবো জানি না। যা ছিলো সব ভেঙে চুরে সব শেষ। আল্লাহই জানে আমাদের কপালে এখন কি আছে। একটু আগে যাদের থাকার জায়গা ছিলো তারা এখন সবাই রাস্তায়। শুধু জামের আলী নয় অনেকের স্থান এখন রাস্তার ধারে।

সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির রাস্তার পাশে বাসবাস করেন জবেদা বেগম। তিনি বলেন,‘বৃষ্টির দিনে প্রতিবন্ধী মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো কোথায় থাকবো’, কি হবে আমাদের। আমি হাঁঠের রোগী। সারা দিন ভিক্ষা করে সংসার চালায়। প্রতিবন্ধী দুই মেয়ের নিয়ে বসবাস করছি অনেক আগে থেকে। স্বামী ছিল সে ও ছেড়ে চলে গেছে। আজকে যে ঘর কান ছিলো সেটা ও কেড়ে নিলো এই সড়ক জনপদ। কি করবো কোথায় যাবো বলে কান্না করছিলেন।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্মসদস্য সচিব আলীনুর খান বাবুল বলেন, জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আজকের অভিযানের ফলে শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির মধ্যে তারা কোথায় গিয়ে দাড়াবে তারা জানানে। অভিযানের আগে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বসবাসের ব্যবস্থা করে এই অভিযান পরিচালনা করতে হতো। 

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, এধরনের কাজ করতে নানা ধরনের অভিযোগ থাকবে। কিন্তু থেমে থাকবে না। সাতক্ষীরা শহর থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার সড়কের ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগে বার বার মাইকিং করে এবং নোটিশের মাধ্যমে দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা সরিয়ে না নেওয়ায় আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছি। তিনি আরো বলেন ইতোমধ্যে শহর থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ৪ লেন সড়কের টেন্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের জায়গা উদ্ধারের পর বাকী কার্যক্রম শুরু হবে।

মেসেঞ্জার/আসাদ্দুজামান/নকীব