ছবি: মেসেঞ্জার
এখনও খোলা তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের ৪৪ টি জলকপাট বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চতুর্থ দফায় বাড়া পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি কমলেও এখনও ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে কাউনিয়া পয়েন্টে। তবে পিবদসীমার নীচে অবস্থান করছে লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি। এখনও খোলা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে পাউবো। অববাহিকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল-নিম্মাঞ্চলের প্লাবিত মানুষের দুর্ভোগে।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২ টায় রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় যা ছিল বিপদ সীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপরে। এছাড়াও লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃহস্পতিবার বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার ছিল ২৫ সেন্টিমিটার নীচে।
তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব আরও জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে তিস্তায় নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘন্টায় আবারও বাড়া কমা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এনিয়ে তিস্তায় গেলো ২৩ দিনে চারদফায় তিস্তায় পানি বাড়লো বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে।অববাহিকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন আছে যাতায়াত। নৌকা-কলার ভেলায় কোনমতে যাতায়াত করছেন মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না এবং শিশুদের নিয়ে বিপাকে পানিবন্দিরা। তলিয়ে গেছে উঠতি বাদামসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিলেও এসব মানুষের পাশে এখনও পাশে দাড়ায় নি কেউ। পানি নামা শুরু করলেও কমেনি দুর্ভোগ।
তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়ার গদাই, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর লালমনিরহাটের হাতিবান্দার সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালিগঞ্জের কাকিনা, আদিতমারির মহিষাখোচ, সদরের খুনিয়াগাছ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, গতিআসাম, বুড়িরহাট, উলিপুরের ঠুটাপাইকর, থেতরাই, বজরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ইউনিয়নের অন্তত ১২৫ পয়েন্টে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেস্টা চলছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা উত্তরের ২ কোটি মানুষের জীবনরেখা। প্রতিবছর এখানে ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়। প্রায় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। যেহেতু পানি চুক্তি হচ্ছে না। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। আমরা চাই চীন ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, আমরা সতর্ক অবস্থায় মাঠে আছি। এরই মধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, তিস্তার নিম্মাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের পাশে আছে প্রশাসন। এখন পানি নামা শুরু করেছে। মোকাবেলা করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রেখেছি। সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি আছে আমাদের।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন। যেহেতু তিস্তায় ফ্লাশ ফ্লাড হয়, সেকারণে পানি উঠলেও দ্রুত নেমে যায়। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছি স্থানীয় প্রশাসনকে।
মেসেঞ্জার/শাহেদ