ছবি : মেসেঞ্জার
চলতি বর্ষা মৌসুমে তিস্তায় পরপর কয়েকবার পানি বাড়লেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পানিবন্দি কিংবা ক্ষয়ক্ষতির সম্মূখীন হয়েনি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামের কোনো বাসিন্দা।
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। সেখানেও কোনো বরাদ্দ দিয়েছে জিআর প্রকল্পের ৯ মেট্রিক টন চাল। বন্যার্তদের পরিবর্তে বিতরণ করা হয়েছে বালু বাধ সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাঝে। তা নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক বিএনপি নেতা ও নব্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিনের বিরুদ্ধে বন্যা দুর্গতদের মাঝে জিআর চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের দু'একজন সাধারণ সদস্য ব্যতিত কেউই জানেন না। বিতরণে নেই কোনো উধ্বর্তন কর্মকর্তা। ৯ মেট্রিক টন চালের মধ্যে একাই তিস্তা বালু বাধ নির্মাণে ২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছেন।
বালু বাঁধ নির্মাণকারী শ্রমিকদের টাকার পরিবর্তে চাল দিয়ে তাদের পরিশ্রামিক দিয়েছেন। এছাড়াও সমতলে থাকা ২৫ জন সুবিধাভোগির নামের এ চাল বিলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার বন্যা দুর্গত টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৪ গ্রামের প্রায় ৭০০ জন দুস্থদের মাঝে ২০ কেজি করে প্রায় সাড়ে ৯ মেট্রিক টন বিতরণের জন্য জিআর বরাদ্দ আসে। চেয়ারম্যান ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বালু বাধঁ সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাঝে ১০ কেজি হারে প্রদান করা হয়।
অপরদিকে সিলট্যাবে থাকা ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২৫ জনের মাঝে এ চাল বিতরণ করেন। সংরক্ষিত-৩ (৭,৮,৯ নম্বর) ওয়ার্ডের সদস্য ও ২ জন সাধারণ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পছন্দের লোকজনের তালিকা তৈরী করে।
তাছাড়া বাকি সদস্যরা তালিকা তৈরীর বিষয়ে কিছুই জানেন না। অপর সাতটি ওয়ার্ডের মেম্বাররা জানতে পারলে তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অনেকেই অভিযোগ করেন, তাদের ২০ কেজির জায়গায় ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। ১০ কেজি চাল বালু বাধে কেনই দেওয়া হলো সে বিষয়ে আমরা কেউ জানিনা। জিআর এর বরাদ্দ আসলো এখনো আমরা জানি না। চেয়ারম্যানের পছন্দের সদস্যদের নিয়ে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাম পুলিশ জানান, নদীর এপারে এখনো বিলি হয়নি, হবে কিনা তা জানিনা? তবে সিলট্রাবে ২৫ জনের মাঝে ২০ কেজি হারে বিলি হয়েছে। আর ওপারে (বালু বাধে) ১০ কেজি করে দিয়েছে।
সেখানে প্রায় ২০০/২৫০ জনের মাঝে ২.৫ মেট্রিক টন বিলি হয়েছে। সেখানে মহিলা সদস্য রোজিনা, সাধারণ সদস্য নুরুল, জহুরুল ও নুরু সেখানে ছিলেন।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোবাশ্বের আলী জানান, বালু বাঁধে ও সিলট্রাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ দেওয়া হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ বিতরণ করা হয়নি।
এখনো ৭০০ র মতো ক্ষতিগ্রস্ত চাল পাবে, তাদের তালিকা তৈরী করতে দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরি হলে চাল দিয়ে দিবে।
বালু বাধের শ্রমিকদের ১০ কেজি চাল কেন দেওয়া হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে আমি যাইনি, তাহলে সে বিষয় কী আমি জানবো? আমাকে তালিকা দিয়েছে পরিষদে ২৫ জনকে দিতে আর বাকি ৭৫ জনকে ওখানে (বালু বাধে) দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমানকে একাধিক বার ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা জানতে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে অন্য আরেক নম্বর থেকে কথা বলার সময় জিআর প্রকল্পে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখন খাইতেছি পরে কথা হবে বলেই ফোন রেখে দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ছালমা জানান, কত টন চাল দেওয়া হয়েছে তা কাগজ দেখে বলতে হবে। বিতরণে অনিয়ম হলে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তিনি।
উল্লেখ্য: ২ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর বন্যা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে বরাদ্দকৃত ২.০০০ মেট্রিক টন চাল ট্যাক অফিসারের উপস্থিতিতে ২০ কেজি হারে ১০০ জন সুবিধাভোগীর মাঝে বিতরণ করা হয়। যার প্রতিবেদন মহোদয়ের সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাখিল করেন।
মেসেঞ্জার/রিপন/আপেল