ঢাকা,  শনিবার
০৫ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ৬টি স্থান বিপদজনক

আলমগীর হোসেন, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ৬ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৬:১৫, ৬ জুলাই ২০২৪

বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ৬টি স্থান বিপদজনক

ছবি : মেসেঞ্জার

বগুড়ার যমুনা নদীর পানি বেড়ে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়েছে।

শনিবার (৬ জুলাই) ৩০ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় প্রতিঘন্টায় দুই সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধির ফলে বগুড়া অংশের ৪৫ কিলোমিটারের ৬ টি স্থান বিপদজনক হয়ে পড়েছে।

তবে, সবচেয়ে বেশী বিপদজনক সারিয়াকান্দীর ইছামারা নামক স্থান। দুই দফা জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম বণ্যাত্ব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার বগুড়া অংশের সোনাতলা, সারিয়াকান্দী ও ধুনট উপজেলার ৪৫ কিলোমিটারে সোনাতলার সুজাতপুর, সারিয়াকান্দীর হাটশেরপুর, শিমুল দায়ের, কর্নীবাড়ী, ইছামারা ও ধুনটের শহড়াবাড়ী এলাকায় প্রতিনিয়ত পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার পাড় ভাঙ্গন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনেক ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া অংশের ৪৫ কিলোমিটারে সোনাতলার সুজাতপুরে ১৫০ মিটার, সারিয়াকান্দীর হাটশেরপুরে ৩ শ মিটার, শিমুলদায়েরে ৬ মিটার, কর্নীবাড়ীতে ১০০ মিটার, ইছামারায় ৫০০ মিটার এবং শহড়াবাড়ীতে ৬ মিটার যমুনার পাড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

গত বুধবার যমুনায় ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার করে বাড়লেও বৃহস্পতিবার থেকে ঘন্টায় ৩ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বন্যার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।

শুধু সারিয়াকন্দি উপজেলায় ৭৫ টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১১ হাজার ৯৭০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন তথ্য দিয়েছে সারিয়াবান্দি উপজেলা কন্ট্রেল রুম। ৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।

সারিয়াকন্দি উপজেলার কর্নীবাড়ি. কামালপুর, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কুতুবপুর, দেবডাঙ্গা রোহদহ এলাকার অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

আবার অনেক ইউনিয়নের মানুষ মনে করছে এই বন্য দীর্ঘ স্থায়ী হবে না। তাই তারা বসত ভিটাতে রয়ে গেছেন। বন্যার পানি বাঁধের নিচে স্পর্শ করেছে। ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ৮টি মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে।

ইছামারা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন জানান, আমাদের গ্রামের সিংহভাগ এখন যমুনায় বিলীন। কিছু অংশ আছে গ্রামের। গতবার তিনদিনের ভাঙ্গনে ১৭’শ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এবারও ওই ভাঙ্গনের দক্ষিণ পাশে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ধরেছে ফাটলও। ভাঙ্গন গতবারের মত হলে একদিনও লাগবে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে আঘাত হানতে।

শহড়াবাড়ী গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, সেখানে ভাঙ্গন শুরু হওয়ার পরই জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলানো হচ্ছে। তবে স্রোতের তীব্রতা বাড়লে কি হবে বলা যাচ্ছে না।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান জানান, এ পর্যন্ত জেলার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দিতে ৮২১ হেক্টর জমির ভুট্টা, পাট ও শাকসবজি তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও ফসলী জমি তলিয়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া সার্কেলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির জানান, শনিবার বেলা ১২ টায় যমুনার পানি বেড়ে ১৬ দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যতই পানি বাড়ছে ততোই নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে এখন কোন ঝুঁকি দেখছিনা।

এদিকে, ৬ টি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গলেও সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ইছামারা অংশে। কারণ, নদী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধের দুরত্ব মাত্র ৩ শত মিটার। গত বছর সেখানে ১৭’শ মিটার ভেঙে ছিল। সেখানে কাজ করা হয়েছে। যমুনার ভাঙ্গনের যে গতি তাতে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হলে বাধ পর্যন্ত ঠেকে যেতে বেশী সময় লাগবে না।

তিনি আরও জানান, প্রতি ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি হচ্ছে। ২৪ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৩ সেন্টিমিটার। পানি এখন বিপদ সীমার মাত্র ৩৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের আশ্রয়ণের জন্য ৬টি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তত রাখা হয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের সরকারিভাবে ত্রাণ-সামগ্রী বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে আরও ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

মেসেঞ্জার/আপেল

×
Nagad