ঢাকা,  শনিবার
০৫ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ৬ জুলাই ২০২৪

ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি : মেসেঞ্জার

হতদরিদ্র কৃষক স্বামীর সংসারে সরকারি সহযোগিতা পেতে বিগত প্রায় দুইবছর আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বারস্ত হয়েছিলেন রোকেয়া বেগম (৫২) ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের কাছে আকুতি মিনতিতে পাঁচশ টাকার বিনিময়ে পেয়ে যান একটি ভিজিডি কার্ড।

প্রথমবার সহযোগিতা পেলে বন্ধ হয়ে যায় সেই ভাগ্যের দুয়ার। কেড়ে নেওয়া হয় তার সহায়তা কার্ড। এরপর তার নামে প্রতিবারই আসতে থাকে সরকারি চাল, ডাল সহ বিভিন্ন উপকরণ। কিন্তু একবারও পৌছেনি তার হাতে।

শুধু রোকেয়া বেগম নয়- এই ইউপিতে এমনই ৪০ জন ব্যক্তির নামে মাসের পর মাস আসতে থাকে সরকারি সহযোগিতা। তাদের মধ্যে অনেকেই জানেনই না তার নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে। কিন্তু উপকারভোগীদের তালিকায় রয়েছে তাদের নাম।

এইকার্ডের উপকারভোগীদের পরিবর্তে বরং সেই চাল ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ যাচ্ছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ৮নং শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ পরিষদের সদস্যদের পকেটে।

সরেজমিনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে না গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অফিসকে ইউপি কার্যালয়ে রুপান্তরিত করেছেন।

ওই ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস মোল্যার স্ত্রী রোকেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, অনেক ঘুরে চেয়ারম্যানকে পাঁচশ টাকা দিয়েএকটা কার্ড পাইছিলাম। কিন্তু তা আমারে অন্যএকজনের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে বলে চেয়ারম্যান এবং তার কাছ থেকে বাকি ২৫০ টাকা নিয়ে নিতে বলে। কিন্তু ওই লোক ভাগে নিতে চায় না।

বিষয়টি আমি চেয়ারম্যানকে জানালে সে আমাকে রাগ করে বলে ভাগে খাইলি খাবা, নইলে যাও। পরে নত হয়ে একবার আনলাম। পরে আমি চৌকিদারকে (গ্রামপুলিশ) বললে, চেয়ারম্যান আমার উপর আর রেগে যায়। এরপর আমার কার্ড রেখে বের করে দেয়। তারপর আজ ১৮/১৯ মাস কোনো চাল-ডাল দেয়না।

রোকেয়া বেগমের মতো এই ইউনিয়নের ৪০ জনের নামে ভিজিডি কার্ড রয়েছে। তাদের নামে আসা সকল চাল, ডাল আত্মসাৎ করছেন চেয়ারম্যান নিজেই। বিষয়টি অনেকেই জানতে পেরে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। মাসের পর মাস সরকারি রিলিফের খাদ্যসহায়তা না পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন পরিবারগুলো।

ওই লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখর ইউনিয়নে ২৪০টি ভিজিডি কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ইউপি সদস্যদের /৬টি করে কার্ড দিয়ে নিজে কিছু বিতরণ করেছেন। বাকিগুলো বিভিন্ন মানুষের নামে কৌশলে ইস্যু করে চেয়ারম্যান আত্মসাৎকরছেন।এই অভিযোগপত্রে ৩০ জন স্বাক্ষর করেন।

এই সুবিধাভোগীদের তালিকার ২৪০ ব্যক্তির মধ্যে অনেকেই জানেনা তাদের নামে ইস্যু হওয়ার কার্ডের খবর। এদের মধ্যে কোনো না কোনোভাবে পাঁচশত টাকাসহ তাদের ভোটার আইডিকার্ড, ছবি দিয়েছিলেন ইউপিসদস্য চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু পরবর্তিতে তারা জানতেই পারেনি তাদের নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে।

ভিজিডি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে নিজের স্বামী বিল্লাল শিকদারের ছবি দিয়েছিলেন রাখালতলী গ্রামের জোসনা বেগম। এরপর জানতে পারেনি তার নামে কার্ড ইস্যু হয়েছে। কিন্তু ভিজিডি কার্ডের তালিকায় ১২৩ নম্বরে নাম রয়েছে তার।এই নারী বলেন, আমাগো নাম ছবি নিয়েছিল কিন্তু আজওআমরা কিছু পাইনি।কার্ড হয়েছে কি-না তাও আমি বলতে পারব না।

এই ভিজিডি কার্ডের তালিকা ধরে যাওয়া হয় ইউনিয়নের বারাংকুলা গ্রামের মোঃ দেলোয়ার কাজীর বাড়িতে। বাড়ির চারদিকে টিনেরবেড়া দিয়ে ঘেরা, ভেতরে আধাপাকা জোড়ঘর রয়েছে, দেখে মনে হবে না কোনো হত দরিদ্রের বাড়ি। অথচ ওই তালিকায় ১২৭ নম্বরে দেলোয়ার কাজীর স্ত্রী লিমা সুলতানার নাম রয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে দেলোয়ার কাজী হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি জানেই না তার স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ড রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার জানা মতে কোন কার্ড নেই। এমনকি কোনো সুবিধাও পাইনি। আমিতো কখনও আবেদনই করি নাই। আল্লাহ জানে কেমনে কি হয়েছে? এটা যে করেছে সে অবশ্যই অপরাধ করেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের একজনকে কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিবে। এতে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মেসেঞ্জার/নাজিম/আপেল

×
Nagad