ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে যা বললেন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৭ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৭:৪৫, ৭ জুলাই ২০২৪

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে যা বললেন শিক্ষার্থীরা

ছবিঃ মেসেঞ্জার

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

নিয়ে সপ্তম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। নোটিশের জবাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক জিয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায় শিক্ষার্থীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২২জুন প্রাইভেট পড়তে গেলে শিক্ষক জিয়াউর রহমান তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। ওই দিন একই ব্যাচে তার সহপাঠী সপ্নীল সরকার, হামিম সরকার নিরব এবং সামিম আহমেদ প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল।

ব্যাচের এই শিক্ষার্থীরা দবি করেছেন, শিক্ষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সর্বতভাবে মিথ্যা। সেদিন প্রাইভেট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা একই কক্ষে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীসহ একসঙে বসে ছিলেন।

ওই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগে তাকে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ তুলেছে তেমন কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। নির্ধারিত সময়ে প্রাইভেট পড়া শুরু হলে পাঠদান শেষে তাদের কে ছুটি দেয়া হয়। তারা একসঙ্গে প্রাইভেটস্থল থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে যান। ওই শিক্ষার্থী শিক্ষক জিয়া পৃথক ভাবে কোনো আলাপচারিতা করেন নি।

এরপরেও কেনো ওই শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তা তারা ভেবে পাচ্ছেন না।তারা বিষয়টিকে শিক্ষক জিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।

ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠী এস এম হামিম সরকার নীরব, স্বপ্নীল সরকার, শামীম আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা একসাথে চার জন প্রাইভেট রুমে ঢুকেছি এবং প্রাইভেট শেষ করে একসাথে বের হয়েছি। এর মধ্যে প্রাইভেট চলাকালীন সময়ে কেউ বাইরে বের হইনি। স্যারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি নিসন্দেহে মিথ্যা বানোয়াট। কারণ ওইদিন এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটে নাই।

লিখিত অভিযোগে প্রাইভেট পড়ার কিছু সময় পর বাড়ি চলে যাওয়ার বিষয় দাবি করলেও পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙে কথে বলে দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ঘটনারদিন পরে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সেদিন একই সঙ্গে চারজন কে বের হতে দেখেছেন।

শিক্ষার্থী নওশিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমারা ওই দিন ১০ মিনিট আগে প্রাইভেটে গিয়েছিলাম। সেদিন রুমের মধ্যে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী তার সহপাঠী সহ চার জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রাইভেট শেষ হওয়ার পর তারা চার জন এক সাথে বেরিয়ে এসেছে এরপর আমরা রুমে ঢুকেছি। তবে অন্য কোন ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নাই।

৮ম শ্রেণির সানজিদা বিনতে শোভা নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমি সেদিন প্রাইভেট পনেরো মিনিট আগে গিয়েছিলাম এবং ভুক্তভোগী ওই মেয়ে সহ তার তিন বন্ধু কে প্রাইভেট শেষ করে বার হইতে দেখেছে। তাছাড়া ওই মেয়ের সাথে স্যার পড়াশুনা বিষয়ে কথাও বলছিলেন। আমার জানা মতে সেদিন এমন ধরনের কোন ঘটনাই ঘটে নাই।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার দিন সকালে প্রাইভেট শুরুর কিছু সময় আগে গিয়েছিল। এরপর পূর্বের ব্যাচের সঙে কক্ষে বসেছিল। এসময় পূর্বের ব্যাচের সময় শেষ হলে তারা কক্ষ থেকে বের হয়ে চলে যায়। পরে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক রুমে একা অশালীন কথাবার্তা বলেন। এসময় বাইরে থাকা তার সহপাঠী সামিম ভিতরে আসলে ওই শিক্ষক তাকে বাইরে ডাকেন এবং সে কিছু সময় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে শিক্ষক বাইরে এসে কুপ্রস্তাব দেন।

তবে তার সহপাঠীদের দেয়া মন্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ঘটনার দিন প্রাইভেটে আমার মেয়ে একাই ছিল। আর বাইরে তিন জন ছেলে তারা ছিল। আমার মেয়ে প্রতিদিন যেখানে বসে সেদিনও ওখানে গিয়ে বসে। এসময় শিক্ষক গিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন। এরমধ্যে বাইরের থেকে যখন ছেলে গুলো ভিতরে ঢুকেছে তখন ওই শিক্ষক দরজার দিকে গিয়ে টিউবওয়েল পাড়ে যেতে বলেন আমার মেয়েকে। যাওয়ার পর শিক্ষক কুপ্রস্তাব দেন। আমি শোনার পরই স্কুলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তবে শিক্ষার্থীর এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৈয়ব আলী জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলে জরুরী সভার আয়োজন করা হবে। তারপর বিধি অনুসারে অভিযোগের তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

মেসেঞ্জার/রাফি/সৌরভ

×
Nagad