ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

যমুনার ভাঙ্গনে পানিতে ভেসে যাচ্ছে কবরস্থানের মরদেহ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ১১ জুলাই ২০২৪

যমুনার ভাঙ্গনে পানিতে ভেসে যাচ্ছে কবরস্থানের মরদেহ

ছবি : মেসেঞ্জার

উজানের পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ ভাঙনের কবল থেকে রেহায় পায়নি কবরস্থানও। এ যমুনায় ভেসে যাচ্ছে ওই কবরস্থানের মরদেহ। 

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ দিন ধরে যমুনার তীব্র স্রোতে উপজেলার ভুতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকা পর্যন্ত ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে ভেসে যাচ্ছে ওই কবরস্থানের মরদেহ।

স্থানীয়রা জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে শুরু হয়েছে তীব্র স্রোত। সেই স্রোতে শুরু হয় ভাঙন। ভাঙনে কবরস্থানের বেশ কিছু অংশ ভেঙে কয়েকটি মরদেহ ভেসে গেছে। এছাড়া পাঁচ থেকে ছয়টি মরদেহ স্বজনরা উদ্ধার করে অন্যস্থানে কবর দিয়েছেন। ভাঙন নিয়ন্ত্রণে জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিং করছে উপজেলা প্রশাসন। 

পানি উন্নয়ন অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে যমুনায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে সদরের কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিস, শাহজাদপুরের পাচিল, হাটপাচিল, জালালপুর, কৈজুড়ী ও চৌহালী উপজেলার ভুতেরমোড় এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

ময়নাল সরকারের কবরস্থান এলাকার আমিনুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম বলেন, চারদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ভুতের মোড় থেকে ময়নাল সরকারের কবরস্থান পর্যন্ত তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়। এতে কবরস্থানের কিছু জায়গা ভেঙে কয়েকটি মৃতদেহ নদীতে ভেসে গেছে।

তারা বলেন, নদীর স্রোতে ভাঙনে সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। যারা ভাঙনের সময় কবরস্থানের পাশে ছিল, তারা কয়েকজনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু রাতের বেলায় কেউ থাকে না। তখন কত মরদেহ ভেসে গেছে কেউ জানে না।

বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা বলেন, উজানের তীব্র স্রোতে এই এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি ভেঙে নদী গভে চলে গেছে। এই ভাঙনে কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আমি ভাঙন এলাকায় গিয়ে চার থেকে পাঁচটি মৃতদেহ ভাসতে দেখেছি। 

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় তীব্র স্রোতের কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ কবরস্থানের কিছু অংশ ভেঙে নদীতে চলে গেছে। এসময় কয়েকটি মরদেহও নদীতে ভাসতে দেখা গেছে। সেখানকার কিছু মরদেহ উদ্ধার করে অন্যত্র দাফন করা হয়েছে। তবে তারপরও রাতের আধারে কিছু মরদেহ ভেসে গেছে। 

তিনি বলেন, দ্রুত জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলে ওই এলাকার ভাঙ্গন বন্ধ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ওখানে আর ভাঙ্গন না থাকলেও পাশের আরেকটি এলাকাতে আছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই এলাকা থেকে আগেই স্থাপনা গুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভাঙ্গন কবলিতদের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুইদিন পানি কমার পরে আবারও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১২ ঘন্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেরে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

মেসেঞ্জার/অদিত্য/আজিজ

×
Nagad