ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

বিএনপি নেতা জুলফিকারের বিরুদ্ধে তদন্তে পিবিআই

মোংলা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৩ জুলাই ২০২৪

বিএনপি নেতা জুলফিকারের বিরুদ্ধে তদন্তে পিবিআই

ছবি : মেসেঞ্জার

মোংলা পোর্ট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে হামলা, আর্থিক ক্ষতি ও চাঁদাবাজির মামলার তদন্তে নেমেছে পিবিআই। গত বছর ঢাকার ব্যবসায়ী এফার রহমান ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই মামলা করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গত বুধবার (১০জুলাই) এই মামলার তদন্তে মোংলায় এসে জুলফিকার আলীর সহযোগী রামপালের বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান তুহিনের তেতুলিয়া এলাকার ট্যাংরামারীর মাছের ঘের থেকে ছিনতাই হওয়া একটি এস্কেভেটর/ভেকু (মাটি কাটা যন্ত্র) উদ্ধার করে। 

মামলার বাদী ও পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কলাবাগানের সিআর রোডস্থ মেসার্স এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে মোংলার স্থায়ী বন্দরের আমজাদ বেগ পেট্রোল পাম্প এলাকায় পদ্মা সেতুর জন্য আমদানীকৃত পাথর স্তুপ/সংরক্ষণ করে। পরে ওই পাথর বোঝাই করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ৩কোটি টাকা মূল্যের ৫টি ট্রাক ও ১টি এস্কেভটর/ভেকু মোট ৬টি যানবাহন ব্যবহার করতে থাকে।

এক পর্যায়ে মোংলা পোর্ট পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জুলফিকার আলীর দৃষ্টি পড়ে পাথর বোঝাইয়ের কাজে নিয়োজিত ওই যানবাহনগুলোর ওপর। ওই বছরের ২৬ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার দিকে জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে ৬/৭জন সন্ত্রাসী ক্যাডার অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাথর স্তুপ/সংরক্ষণ করে রাখার স্থানে চড়াও হয়ে অস্ত্রের মুখে ওই ৬টি যানবাহন জোর করে ছিনিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

পরে ওই যানবাহন ছেড়ে দেবার কথা বলে জুলফিকার আলী প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ এরশাদ আলীর কাছ থেকে চাঁদা বাবদ ৫লাখ টাকা আদায় করে। এ চাঁদার টাকা নিয়েও পরবর্তীতে জুলফিকার আলী যানবাহনগুলো না ছেড়ে পুনরায় ৬লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। 

এরপর ওই কোম্পানী আটক যানবাহনগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য জুলফিকার আলীকে একাধিকবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেও তিনি তাতে কোন সাড়া দেননি। এভাবে প্রায় ৫বছর অতিবাহিত হওয়ার পর জুলফিকার আলী সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দিয়ে ২০২৩সালের ১২এপ্রিল সন্ধ্যার পর ঢাকার বিজয় নগরের পানির ট্যাংক এলাকায় মেসার্স এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিকের ছেলে এফার রহমানের সাথে দেখা করেন। এ সময় জুলফিকার আলী এফার রহমানের কাছে আটক যানবাহনগুলো ছাড়া বাবদ ২০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এক পর্যায়ে সেখানে জুলফিকার আলী ও তার সহযোগী বাহাদুরসহ কয়েকজন ক্যাডার ব্যবসায়ী এফার রহমানের উপর চড়াও হয়ে হামলা ও মারধর করে। এক পর্যায়ে এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ওই ব্যবসায়ীকে গুম ও খুন করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। 

এ ঘটনায় মেসার্স এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিকের ছেলে এফার রহমান বাদী হয়ে ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জুলফিকার আলীসহ ৭/৮জনের নামে গত বছরের ১৭এপ্রিল একটি মামলা করেন। এ মামলার আর্জিতে বাদী আরো উল্লেখ করেন, জুলফিকার আলী তাদের ৬টি যানবাহন দীর্ঘ কয়েক বছর আটকে রেখে প্রায় ৯কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন।

এদিকে আদালত মামলাটির প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব দেন পল্টন থানা পুলিশকে। পল্টন থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে আদালতে মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে বাদী আদালতে ওই প্রতিবেদনের নারাজি দিলে আদালত গত ২৪ জানুয়ারী ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ'র পিবিআইকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন।

তদন্তের সূত্র ধরে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক এমদাদুল হক মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সরেজমিনে মোংলায় আসেন। পরে বুধবার (১০ জুলাই) তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে জুলফিকার আলীর সহযোগী মোংলার পাশ্ববর্তী রামপাল থানা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমান তুহিনের মৎস্য ঘের থেকে এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের আটকে রাখা ৮৮লাখ টাকা মূল্যের এস্কেভেটরটি উদ্ধার করে রামপাল থানা পুলিশের হেফাজতে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) পরিদর্শক এমদাদুল হক জানান, মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির এর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। 

এদিকে মোংলা পোর্ট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মোংলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে পিবিআই’র মামলার তদন্তকে কেন্দ্র করে মোংলায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এতদিন মামলার বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসলেও মোংলায় পুলিশের তদন্ত আসার পর পুরো শহরে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মেয়রের প্রভাব দেখিয়ে তিনি এরকম অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জুলুম ও প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসেম এন্ড সন্সের কাছে বিপুল পরিমান শ্রম মজুরী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে জুলফিকার আলী বলেন, ওই কোম্পানির আমদানী পণ্য খালাসের ষ্টিভিডর্রিং করা বাবদ আমি তাদের কাছে ১৮লাখ টাকা পাই। সেই টাকা না দিয়ে উল্টো তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানী করছে। তারা এর আগেও আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলো সেটিতেও তারা হেরে যান। তারপরও তারা আমাকে একের পর এক হয়রানী করে যাচ্ছে। 

মেসেঞ্জার/আবুল/আজিজ

×
Nagad