ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

কৃষকের চোখে সোনালী আঁশের স্বপ্ন

জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৪ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৬:৫০, ১৪ জুলাই ২০২৪

কৃষকের চোখে সোনালী আঁশের স্বপ্ন

ছবি : মেসেঞ্জার

যশোরের শার্শা উপজেলায় অনুকূল পরিবেশে ও আশানুরূপ লাভজনক হওয়ায় চলতি বছর অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে সোনালি আঁশ পাট চাষ। এই চাষকে ঘিরে কৃষক আগামির সোনালি আঁশে ইতিমধ্যে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

এ অঞ্চলের মাটি পাট চাষের উপযোগী হওয়ায় উন্নত মানের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাট চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচ, উৎপাদন ভাল, লাভজনক ফসল ও স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য সরাসরি পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা।

এছাড়াও নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরার্মশ প্রদান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি সহায়তার ফলে পাট চাষে কৃষকের মধ্যে বেশ আগ্রহ বেড়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকের জন্য সার্বিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাট চাষ।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শার্শা উপজেলায় ২০২২-২০২৩ মৌসুমে প্রায় ৫৪৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ৫ হেক্টর বেড়ে ৫৪৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।

এ অঞ্চল পাট চাষের উপযোগী দো-আঁশ মাটি, মান ভাল, অনুকূল পরিবেশে রোগ বালাই কম, কৃষকদের প্রতি কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ ও নিয়মিত পরামর্শ, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ভর্তূকির বিনামূল্যে বীজ প্রদানসহ অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে।

চাষকৃত পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে দেশি সিভিই-৩, সিসি-৪৫, ডি-১৫৪-২ বি জে আর আই-৫, রবি-১ ইন্ডিয়ান জাতের মধ্যে কৃষি সেবাইন-১৩৫২৪, শঙ্খ-৯৮৯৭ ও তোষা-৮।

পাট চাষের উপযুক্ত সময় হল বাংলা ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ১ লা বৈশাখ। কাটার সময় আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত। দুভাবে পাট চাষ করা যায়। প্রথমত ট্রাক্টরে চাষ দিয়ে নির্ধারিত নিয়ম মেনে বীজ ছিটিয়ে ও লাইনে বোনা এবং দ্বিতীয়ত বিনা চাষে ধানের জমিতে ছিটিয়ে পাট বীজ বোনা হয়ে থাকে।

উপজেলার চাষিরা জমি চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে বোনা এবং বিনা চাষে ধানের জমিতে ছিটিয়ে পাট চাষ করেছেন। পাটের রোগবালাইয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কান্ড পঁচা, কালোপট্রি, পাতার মোজাকি, ঢলে পড়া, শুকানো ক্ষত, আগা শুকানো, বিছাপোকা, ঘোড়াপোকা, উড়চুঙ্গাঁ, চেলেপোকা, সাদা ও লাল মাকড় পোকার সংক্রমণ।

এছাড়াও ছত্রাক ও ভাইরাস জনিত রোগও হয়ে থাকে। যেটা নিয়মানুযায়ী সময়মত ব্যবস্থা নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

চাষকৃত পাট বীজ বোনার ১২০ ও ধানের জমিতে পাট বীজ ছিটিয়ে বোনার ১১০ দিনের মধ্যে পাট কাটার উপযোগী হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এমন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার বিঘা জমিতে দেশি ও বিদেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে। সোজা দন্ডায়মান সেই পাট গাছ ও তার সবুজ পাতা মাঝেমাঝে বাতাসে যেন আপন মনে হেলে দুলে দোল খাচ্ছে। দেখে মনে হয় এ যেন বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ।

পাট চাষ সম্পর্কে কথা হয় ডিহি ইউনিয়নের দরিদূর্গাপুর গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, মিজাম উদ্দিন ও মাহবুব আলি, শার্শা ইউনিয়নের শ্যামলাগাছী গ্রামের নাজিম উদ্দিন, উলাশী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের েআমিরুল ইসলাম, কায়বা ইউনিয়নের পাঁচ কায়বা গ্রামের মেছের আলী, গোগার গোলাম রসুল ও বাহাদুরপুরের মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে।

তারা বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী এ বছর তারা ৫ থেকে ২০ বিঘার মত জমিতে ছিটিয়ে পাট চাষ করেছেন। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রচন্ড দাবদাহে পাটে তেমন কোন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে না। তবে বৃষ্টিহীন পাটক্ষেতে সেচ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পাট কাটার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষ অনুযায়ি বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৬ মন পাট পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।

বাজারে পাটের দাম ভাল পেলে তারা সকলেই সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার মত লাভ করতে পারবেন বলে জানান। সেই সাথে স্থানীয় ও বাইরের জেলা গুলোতে পাটখড়ির ভাল চাহিদা থাকায় বিক্রি করে এখান থেকেও বেশ ভাল টাকা তারা সকলেই আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিপক কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনার এক কেজি করে পাট বীজ উপজেলার ২৬০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সার বরাদ্দ না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে চাষিদের সহায়তা করা হয়েছে।

পাট চাষে চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধকরণ সহ নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল ও রোগ বালায় না হলে এবং ঠিক মত জাঁগ দেওয়ার সুযোগ পেলে পাট চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন এমন আশা করা যেতেই পারে।

মেসেঞ্জার/জামাল/আপেল

×
Nagad