ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে লোকসানের নতুন রেকর্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:১০, ১৪ জুলাই ২০২৪

ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে লোকসানের নতুন রেকর্ড!

ছবি : মেসেঞ্জার

চলতি মৌসুমে হাতে গুণে মাত্র পাঁচ দিন চলেছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এতে রেলওয়ের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। লাভের দেখা তো দূরে থাকুক লোকসানের অতীত সকল রেকর্ড ভেঙেছে। নানা আলোচনা-সমালোচনার পরও বিশেষ ট্রেনটি চালু করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।

তবে স্থানীয় আম চাষি, ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা প্রচার বিমুখতায় এবারো আম পরিবহনে সফলতা পায়নি ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন।

রেলওয়ে সূত্র মতে, চলতি মৌসুমের আম পরিবহনের উদ্দেশ্যে গত ১০ জুন চালু হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। প্রথম দিন ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছায় হাজার ৭৫৮ কেজি আম নিয়ে।

তিন বছর ধরে লোকসানে চলা ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি চলতি মৌসুমে অন্তত লাভের মুখ দেখবে, এমনটাই আশা করা হয়েছিল। এজন্য স্পেশাল সার্ভিসটি সফলভাবে পরিচালনা করতে লিফলেট বিতরণসহ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সভা করা হয়েছিল। তবে আগের ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকার লোকসান মাথায় নিয়ে ট্রেনটি চালু হলেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি বরং আগের লোকসানের রেকর্ড ভেঙেছে।

২০২০, ২১ ২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে করে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। জন্য ট্রেনটি ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। আর ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই তিন বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মাত্র পাঁচ দিন এই রুটে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলেছে। এই পাঁচ দিনে ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৬ কেজি। এতে রেলওয়ের আয় হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ৩৪৫ টাকা।

এছাড়া কোরবানি উপলক্ষ্যে একই ট্রেনে দুদিনে পশু পরিবহন করা হয় একশ পাঁচটি। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আয় হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ম্যাংগো স্পেশাল ক্যাটল ট্রেনে মোট আয় হয়েছে লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টাকা।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতে দৈনিক গড়ে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ মোট সাত দিনে (ম্যাংগো ক্যাটেল স্পেশাল) ট্রেনটিতে মোট গড় খরচের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। অংকের হিসাবে রেলওয়ের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫ টাকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহীর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম পরিবহনে অব্যবস্থাপনা দায়সারা ভাবের কারণেই লাভজনক এই সেবা খাতটি শেষ পর্যন্ত লোকসানে বিপর্যস্ত হয়েছে।

বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের অনলাইন বুকিং আধুনিক সেবার কাছে সরকারি এই সনাতনী সেবা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এবারো ট্রেনের শিডিউল ঠিক না থাকা, সময়মতো আম পৌঁছানোর অনিশ্চয়তা এবং পাঠানো গ্রহণের ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগের ঝামেলা ছিল। তাই কম খরচের এই সরকারি সেবাটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ভরা মৌসুমে স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ব্যবসায়ীরা আম পরিবহনের সুফল পান না। কারণ, এর মাধ্যমে খরচ কম হলেও এটি ডোর টু ডোর সার্ভিস দেয় না।

দেশের ডাক বিভাগের অনেক গাড়ি আছে। তাদের ডিজিটাল সিস্টেমও আছে। তারা যদি আন্তঃবিভাগীয় সভা করে আমগুলো ট্রেনে পরিবহনের পর আবার ডোর টু ডোর পরিবহন করে পৌঁছে দেয় তবে এটিই লাভজনক হবে। আর এই উদ্যোগ নিলে আম চাষি, ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষও এতে আগ্রহ দেখাবেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আহমদ হোসেন মাসুম জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সেবা। তারা কম খরচে আম পরিবহনের সুযোগ করে দিতে চেয়েছেন সব সময়ই। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের মাধ্যমে আম পরিবহন করেননি।

তারা রেলের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় এই লোকসান গুণতে হয়েছে। অথচ, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন নিয়ে এই সার্ভিস চালুর আগেই সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় সভা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছিল।

কিন্তু মানুষজন সড়ক পথকেই বেছে নিয়েছেন। আসলে কেউ একটা জায়গায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাদের সেখান থেকে বের করে আনা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন এই রেলওয়ে কর্মকর্তা।

মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল

×
Nagad