ছবি : মেসেঞ্জার
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে আক্কাস আলী ও রিয়াজ উদ্দিন নামে দুজনকে খুন করা হয়েছে। দুই হত্যার একদিন পেরিয়ে গেলেও দুটি ঘটনার একটিরও মামলা হয়নি। তবে রিয়াজ হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম আকিব বলেন, নিহত দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুই ঘটনায় এখনো কেউ মামলা দায়ের করেননি।
মামলা দায়েরের জন্য নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ দুই ঘটনায় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
রিয়াজ হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৫ টার দিকে রামকৃষ্ণপুর মাঠে ধানের বীজতলা থেকে বৃষ্টির পানি বের করতে গেলে কৃষক আক্কাস আলীকে (৫০) মারপিট করে কাদায় ফেলে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এর আগে একইদিন বেলা ১১টার দিকে একই উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শানপুকুরিয়া গ্রামে জমিজমা বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইরা রিয়াজ উদ্দিন (৪৭) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত আক্কাস আলী পার্শ্ববর্তী কুমারখালী উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের মৃত মোবারক প্রামানিকের ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন। নিহত রিয়াজ উদ্দিন কুমারখালী উপজেলার শানপুকুরিয়া গ্রামের মৃত ময়নুদ্দিন শেখের ছেলে। তিনি ব্যবসা ও কৃষি কাজ করতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহত রিয়াজের সাথে তার চাচাতো ভাই হারুনের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এ নিয়ে শনিবার সকালে কাঠাল পাড়াকে কেন্দ্র করে রিয়াজের সাথে হারুনের বাকবিতণ্ডা হয়।
এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হারুন ও তার লোকজন রিয়াজের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় কুপিয়ে ও এলোপাথাড়ি মারপিট করে গুরুতর আহত করে হারুন ও তার লোকজন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাড়ে ১২টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, হারুন, নজু, ফজু, নজুর ছেলে আলামিন, সিদ্দিকের ছেলে মশুম, হোসেন, হোসেনের ছেলে ও বউ, ফারুকের বউ রিয়াজের বাড়ির উপর গিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জমি সংক্রান্ত নিরোধের জেরে হারুন ও তার লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে দরবেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস তার বড় ভাই আজাদ প্রামানিকের ধানের বীজতলা থেকে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি সরকারি কালভার্ট বের করতে যান। এসময় জমির আইল কাটা নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আলাই ও তার চার ভাই সহ কয়েকজনের সঙ্গে তিনি কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হন।
একপর্যায়ে আক্কাসকে ধাক্কা মারপিট করে এবং জমির ভিতরে পানিতে ফেলে দিয়ে কাদার মধ্যে ধরে রাখে তারা। পরে অন্যরা উদ্ধার করে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাড়ে ৫টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আক্কাস আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে কুমারখালী থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহতের বড় ভাই ও প্রত্যক্ষদর্শী আমজাদ আলী বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার ধানের বীজতলা ডুবে যায়।
অতিরিক্ত পানি সরকারি কালভার্টের বের করে দেয়ার জন্য আমার ভাই আক্কাস জমির আইল কাটাতে ছিলো। এসময় আলাই, হালিম, রাশেদুল, সিদ্দিক, আক্কাস সহ তাদের লোকজন আমার ভাইয়ের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়।
এসময় তারা মারপিট করতে করতে আক্কাসকে জমে থাকা পানি কাদায় ফেলে দেয় এবং কাদার মধ্যে ঠেসে ধরে রাখে। শ্বাসরোধে হত্যা করেছে তারা। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা মামলা করবো।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্তদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম আকিব আরও বলেন, দুটি বিষয়ই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই দুই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মেসেঞ্জার/রাজু/আপেল