ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সৈয়দপুর

নীলফামারী, প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ১৬ জুলাই ২০২৪

কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সৈয়দপুর

ছবি : ডেইলি মেসেঞ্জার

'আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই" প্রতিপাদ্যে সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারাদেশের মত উত্তরের শিক্ষানগরী নীলফামারীর সৈয়দপুরেও আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের ধারাবাহিক কর্মসূচীতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সৈয়দপুরের রাজপথ। প্রায় প্রতিদিনই কর্মসূচী পালন করছে তারা।

এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তারা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুপুর ৩ টায় সৈয়দপুর সরকারী বিজ্ঞান কলেজ সংলগ্ন শহীদ স্মৃতি চত্বর থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে স্মৃতি অম্লান চত্বরে এসে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মিলিত হয়। এ সময় জামে মসজিদ থেকে জিআরপি পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে ২ ঘন্টা ধরে অবস্থান ও  বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাসেল পারভেজ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দিয়ে তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।

প্রেসক্লাবের গেটে মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো রাফায়েতুজ্জাহান, আদিব, মনিন সরকার রাপী, তাওহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আব্দুর রহমান, কাওমিন, তৌহিদ আল রাজী, রাশেদুজ্জামান, রিফাত সান, রাজু ইসলাম, সিয়াম।

বক্তারা সরকারি সকল চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের দাবী জানায়। সেই সাথে অচিরেই সকল শুন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিল না হলে দেশ মেধাশুন্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।

কোটা বাতিলের দাবি দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এতে এখন পর্যন্ত যে সকল ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর বিচার দাবি করে এবং ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার উচিত জবাব দেয়ার হুশিয়ারী উচ্চারন করে।

তারা বলেন, আমরা কোন রাজনৈতিক দলের নই। আমরা ছাত্র সমাজ। পুলিশ, টোকাই, হেলমেট বাহিনী বা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ দিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা। হাইকোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আর কোন বৈষম্য টিকিয়ে রাখা যাবেনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলেও এই অন্যায় ও বৈষম্য মেনে নিতেন না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান আমাদের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে দিন। নয়তো ক্ষমতার তখত নড়বড়ে হয়ে যাবে।

তারা বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৯'র গণ অভ্যুত্থান, ৭১'র মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল বৈষম্য বিরোধী সংগ্রাম। যা বৃথা যায়নি। আমাদের এই বৈষম্য বিরোধী সংগ্রাম কোনভাবেই নস্যাৎ হবেনা। আমরা সফল হবোই। যারা আমাদের বিরোধিতা করে অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ কারীদের রাজাকার উপাধী দিয়ে মূলতঃ মুক্তিযুক্ত ও মহান স্বাধীনতাকে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে সরকার। যা কোনভাবেই সফল হবেনা।

মানববন্ধন চলাকালে কোটা বিরোধী নানা শ্লোগান দেয়া হয় এবং অংশ গ্রহণকারীদের হাতে সেসব শ্লোগান লেখা প্লাকার্ড ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশটা কারো বাপের না', 'কোটা পদ্ধতি নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক', 'সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংষ্কার চাই, কোটা পদ্ধতি বাতিল চাই করতে হবে', 'কোটা বৈষম্যের বিলুপ্তি কর করতে হবে', 'বাবার পেশা ছেলে পাবে, এরপর নাতি, চাষার ছেলে চাষাই রবে, কোটায় গড়া জাতি', 'বেকাররা কোটা বৈষম্য থেকে মুক্তি চায়'।

বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদের সাথে অভিভাবক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণও সম্পৃক্ত হয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমন করে। এসময় তারাও শ্লোগান দেয় এবং বৈষম্যের অবসান দাবী করে। মিছিল চলাকালে ২ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরাও সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং হাত নেড়ে উৎসাহ দেন।

উল্লেখ, ইতোপূর্বেও গত ১২ জুলাই শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডে খোরাক হোটেলের সামনে দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে সৈয়দপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ১৫ জুলাই শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করে। 

মেসেঞ্জার/রিপন/সজিব

×
Nagad