ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

বগুড়ায় যুবককে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারপিট, অতঃপর মৃত্যু

বগুড়া ব্যুরো 

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২৪ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৯:২৪, ২৪ জুলাই ২০২৪

বগুড়ায় যুবককে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারপিট, অতঃপর মৃত্যু

ছবিঃ মেসেঞ্জার

বগুড়ার শিবগঞ্জে মোবাইল ফোনে ডেকে যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারপিট। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। নিহত যুবকের নাম পারভেজ আলম (১৮)। সে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের গাংনগর মাঝপাড়া গ্রামের দুলু মিয়া পুত্র। নিহত পারভেজ সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন।

নিহতের চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, একই গ্রামের গাংনগর মোন্নাপাড়া গ্রামের জহুরুলের পুত্র সৌদি প্রবাসী নয়ন মিয়ার সঙ্গে নিহত পারভেজের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। পারভেজ সৌদিতে যাওয়ার জন্য নয়নকে মোটা অঙ্কের টাকাও দিয়েছেন। এরই মধ্যে উপজেলার বিহার ইউনিয়নের ৯নং ইউপি সদস্য সোহেল হোসেনের বোনের সাথে প্রবাসী নয়নের ফেসবুকে পরিচয় ঘটে। তখন নয়ন ইউপি সদস্য সোহেল হোসেনের বোনকে পরিচয় দেয় যে তার নাম পারভেজ বাড়ি সৈয়দপুর ইউনিয়নের গাংনগর মাঝপাড়া গ্রামে। কিছুদিন পর তার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে নয়ন ওই নারীর একাধিক ছবি তার আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এতে নয়ন কে একাধিক বার নিষেধ করার পরেও সে আবারও ছবি পোস্ট করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই নারীর পরিবার। নয়নের পরিচয় নিশ্চিত করতে তারা কৌশল আটে। একপর্যায়ে রাবেয়া আক্তার নামে ফেসবুক আইডি থেকে নয়নের সাথে দিবানিশি চ্যাটিং শুরু করে। এপর তাদের ফেসবুক সম্পর্ক গাঢ় হয়। নয়ন তখন তার পরিচয় দেয় সে উপজেলার গাংনগর ইউনিয়নের দুলু মিয়ার পুত্র। তখন রাবেয়া তার একটি ছবি দেখতে চায়। এসময় নয়ন পারভেজ কে ফোনে বলেন "দ্রুত তোর একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দে"। পারভেজ তখন ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন বলেন, সৌদিতে আসবি এজন্য বসকে দেখাবো। নয়নের কথা মত পারভেজ তাৎক্ষণিক তার ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয়। এরপর নয়ন পারভেজের ছবি নিজের ছবি বলে রাবেয়াকে পাঠিয়ে দেয়। এরপর রাবেয়া নয়ন কে দেখা করার জন্য বলেন। কিন্তু নয়ন তো প্রবাসে।

পারভেজের ছবি দিয়ে নয়ন তার সাথে পরিচয় দেখায় বা করবে কেমনে। এরপর নয়ন দেখা করবে রাবেয়ার সাথে কিন্তু এক শর্তে দূর থেকে শুধু দেখা হবে। রাবেয়া তাতেই রাজি হয়। এরপর নয়ন পারভেজকে বলে একটি মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। তুই এক মেয়ের সাথে দেখা করবি আমার পরিচিত শুধু দূর থেকে দেখবি মেয়েটা কেমন। বন্ধু নয়নের কথা মত রাজি হয় পারভেজ। কিন্তু সে জানে না এই দেখা করাই তার জীবনের কাল হয়ে উঠবে। এরপর গত ১২জুলাই কালপিট বন্ধু নয়নের কথা মত রাবেয়ার সাথে মহাস্থানগড় জাদুঘর এলাকায় দেখা করতে আসেন পারভেজ।

এদিকে পারভেজকে আটক করতে মহাস্থান জাদুঘর এলাকায় রাবেয়ার ভাই ইউপি সদস্য সোহেল হোসেন আগে থেকেই বেশকিছু সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকেন। পারভেজ মহাস্থান জাদুঘরে পৌঁছা মাত্রই তাকে ছোঁ মেরে সিএনজি চালিতো অটোরিকশা যোগে বিহার ইউনিয়নের দিকে নিয়ে যায় সোহেল। বিহার ৯নং ওয়ার্ডের ফসলি মাঠের ভিতর ১টি ডিপমেশিন ঘরে আটকে রেখে পারভেজকে তার বোনের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার বিষয় উল্লেখ করে বেধড়ক মারপিট শুরু করেন। সোহেল ও তার বাহিনীদের এবিষয়ে কিছুই জানে না শতবার বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পারভেজ। বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই ডিপ ঘরে আটকে পারভেজকে লোহার রড ও বাটাম দিয়ে আঘাত করে পা ভেঙ্গে দেয়। এতে পারভেজের অবস্থা গুরুতর হলে সোহেল পারভেজের বাড়ির নাম্বার নিয়ে তাদের ফোন করে বিহার আসতে বলেন।

এরপর রাত ১২টায় পারভেজের বাড়ির লোকজন মাইক্রোবাস নিয়ে বিহার উত্তরপাড়া সোহেলের বাড়ি থেকে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়ার টিএমএসএস হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেখানে ২ দিন থাকার পর পারভেজের চিকিৎসার অবনত হলে সেখান থেকে রেফার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১দিন থাকার পর তার চিকিৎসার আরও অবনতি ঘটে। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়ার পথে গতরাত ১ টায় তার মৃত্যু হয়। 

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১২টায় মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মাহবুব হোসেন সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিহতের সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 

শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনের নামে  মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের আটক করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নিহত পারভেজের মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মেসেঞ্জার/আলমগীর/আজিজ

×
Nagad