ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

রংপুরে ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ১২০, আসামি ২০ হাজার

নৈরাজ্যে শত কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৪ জুলাই ২০২৪

রংপুরে ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ১২০, আসামি ২০ হাজার

ছবি : মেসেঞ্জার

রংপুরে তিনদিনের সংঘর্ষে থানা, ডিবি কার্যালয়, পুলিশ ফাঁড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা ভবন, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, মৎস ভবন, সমবায় মার্কেট, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, সোনালি ব্যাংক সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, সিটি করপোরেশনের সিসিটিভি ক্যামেরা, ্যাব-পুলিশি বিজিবির গাড়ি, মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পুলিশ বলছে, বহিরাগতরা পুলিশকে জিম্মি করে বামনডাঙ্গার মতো পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেছিল। সংঘর্ষে জনের মৃত্যু এবং সাংবাদিক-পুলিশ সহ অন্তত শতাধিক আহত হয়েছে।

এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি মেয়রের। এর মধ্যে ১০টি মামলা হয়েছে। দিনে কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ১২০ নেতাকর্মী।

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, মাহিগঞ্জ থানা জামায়াতের আমীর আজিজুল ইসলামসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মহানগরীতে কাউন্সিলরসহ ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের মহানগর অফিসে আগুন ভাংচুরের ঘটনায় যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাশেম এবং জেলা অফিসে ভাংচুরের ঘটনায় আহবায়ক কমিটির সদস্য জিনাত হোসেন লাবলু বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছেন।

দুটি মামলাতেই ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১০ টি মামলা হয়। আরও টি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অন্যদিকে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, মঙ্গলবার রাতে সদর কোতয়ালী পীরগাছা থেকে জন বিএনপি এবং কাউনিয়া থেকে ১ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনিয়ে জেলায় গ্রেপ্তার করা হলো ২৫ জনকে।

এদিকে ৫ম দিনে কারফিউ শিথিলের পুরো সময়টায় চিরচেনা চেহারায় ফিরে আসে রংপুর মহানগরী। দেখা দেয় যানজট। যানবাহান চলাচলের পাশাপাশি অফিস আদালতেও চলেছে সব কাজকর্ম। দ্রুত কারফিউ তুলে নেয়ার দাবি নগরবাসির।

মঙ্গলবার রাতেই বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, বুধবার বিভাগের রংপুর গাইবান্ধায় সকাল টা থেকে বিকেল টা এবং পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে সকাল টা থেকে সন্ধা টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেন।

এই খবর পেয়ে রংপুর মহানগরীতে রিকশা, অটো রিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট মাঝারি যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়। খোলে দোকানপাট। অনেকেই ঘর থেকে বাইরে বের হন। কেনাকাটা করেন। অনেকেই বের হন উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে। যেন দমবদ্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হলেন তারা। বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। ব্যবসায়িরাও হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সবাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারফিউ তুলের নেয়ার দাবি জানান।

অন্যদিকে কামারপাড়া কোচ স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে গেছে দুরপাল্লার বাস। তবে যাত্রী কম। চলেছে অফিসও। আদালত এলাকায় দেখা গেছে বিপুল পরিমান বিচারপ্রার্থীর ভির।

রংপুর আদালতের পিপি আব্দুল মালেক জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিচার কার্যক্রম চলেছে। অনেক বিচার প্রার্থী এসেছিলেন আদালতে তারা সবাই খুশি।

পুলিশ, বিভাগীয় জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, রংপুরে ১৬, ১৮ ১৯ জুলাইয়ের এর সংঘর্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র পীরগঞ্জের বাবনপুরের আবু সাঈদ, অটোচালক পুর্ভ ঘাঘটপাড়ার মানিক মিয়া, জুম্মাপাড়ার কলা ব্যবসায়ি মেরাজুল হক মিরাজ, বৌরানী জুয়েলার্সের ম্যানেজার মুসলিম উদ্দিন মিলন, নিউ শালবন, আরসিসিআই মোড়ের রাজমিস্ত্রি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, জুম্মাপাড়ার আব্দুল্লাহ তাহের, সিও বাজার এলাকার মোজাম্মেল হক মারা যায়।

এছাড়াও হাসাপাতালে নথিভুক্ত না করেই লাশ নিয়ে যায় আতিকুর রহমান আরমান হোসেন নামের দুইজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক। এর মধ্যে ৫৭ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সবাই রাবার বুলেট ছররা গুলিবিদ্ধ।

পুলিশ, বিভাগীয় জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, তিনদিনের সংর্ঘর্ষের সময় দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয় তাজহাটা থানা ভবন, ডিবি অপরাধ কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন পুলিশ বক্স, জেলা মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়, মৎস ভবন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় অফিস, মুক্তিযোদ্ধা ভবন।

্যাব-বিজিবি, পুলিশের টি গাড়ি, টি ট্রাকসহ ২৫ টিরও বেশি গাড়ি এবং ১২০ টিরও বেশি মোটরসাইকেল অটোরিকশা পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তাজহাট থানা থেকে মোটরসাইকেল রিকশাসহ, কম্পিউটার মামলার আলামত, ফোর্সের ট্রাংক ভেঙ্গে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এসময়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটক, সিসিটিভি ক্যামেরা, টি ময়লারগাড়ি, মডার্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অর্জন শাপলা চত্তরের রেলিং, টাউন হলে মুজিববর্ষের ডিসপ্লে, সোনালী ব্যাংক, সমবায় ভবন, সাদমান হোটেল, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, সিটি করপোরেশনের তিনটি প্রচার এলইডি টিভিসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে ট্রাফিট পুলিশের বিভিন্ন রোড ডিভাইডারে ভাংচুর লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা।

জেলা পুলিশ লাইন্স, ট্রাফিক অফিস, সার্কিট হাউজ, ডিসি এসপির বাংলোয় হামলা আগুন দেয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ভাংচুর লুটের চেষ্টা হয় সোনালী ব্যাংক, বুথ, অজর্ন ভাষ্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। এসব ঘটনায় অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চুড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার পুলিশ কমিশনার।

মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান জানান, দুষ্কৃতিকারীরা তাজহাট থানায় পুলিশকে জিম্মি করে বামনডাঙ্গার মতো পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশ পেশাদারিত্বের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ক্যাজুইলিটি কমাতে কাজ করেছে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তারা চিহ্নিত। তারা জামায়াত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যত রাঘোব বোয়ালই হোক না কেন ছাড় পাবেন না। তবে নিরপরাধ কাউকেই হয়রানি করা হবে না।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, তিনদিনের নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের লুটপাটের যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটা নৈরাজ্যের চরম অবস্থা। এবং কোনভাবেই এরা দেশ প্রেমিক মানুষ নয়। এরা ছাত্র নয়। ছাত্ররা এরা করতে পারে না। করতে পারেও না। এদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই চুড়ান্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমাদের কাছে অনেক ফুটেজ তথ্য-উপাথ্য আছে। এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

মেসেঞ্জার/আপেল

×
Nagad