ছবি : মেসেঞ্জার
বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের পর মানুষ বের হয়ে আসে রাস্তায়। কেউ অফিসের পথে, কেউ নির্দ্দিষ্ট কাজে এবং কেউ নিত্যপণ্যের দোকানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
ফলে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে অনেকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে গিয়ে পৌঁছাতে পারেননি। তবে একটু বিলম্বে হলেও একটানা তিনদিন ঘরবন্দি থাকার পর ভুক্তভোগীরা অফিসে পৌঁছাতে পেরে খুশি বলে জানান।
নগরীর বিনোদপুর এলাকা থেকে লক্ষীপুর এলাকার একটি ক্লিনিকের চাকরিজীবী গোলাম রসুল জানান, ১০ টার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোয়া ১১ টায় লক্ষীপুরের কর্মস্থলে পৌঁছেন। অন্যদিন একই পথে তার আধা ঘন্টার মত সময় লাগে।
এদিকে টানা ৫দিন পর নিত্যপণ্যের বাজারে ভোক্তাদের ভিড় জমে যায়। তাদের সামাল দিতে দোকানীরা হিমসীম খান।
ভোক্তারা জানান, বাজারে সরবরাহ ঘাটতি এবং ভিড়ের অজুহাতে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাজারে নিত্যপণ্যের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি থাকতে পারে বলে দোকানদাররা জানিয়েছেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় অনেকে অল্প অল্প করে নিত্যপণ্য কিনে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন।
সাহেববাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী তালুকদার জানান, কারফিউয়ের কারণে একমাত্র ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ। পরিবারের প্রয়োজনে বাজারে এসেছিলেন। সবধরণের পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় অল্প অল্প করে কিনেছেন বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে কারফিউ শিথিলের পরপরই রাজশাহী থেকে সকল রুটের আন্তজেলা ও দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল শুরু করে। বিকাল ৫টায় কারফিউয়ের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অনেক যানবাহন রাস্তাতেই অবস্থান করছিল।
এছাড়া স্থানীয় গণপরিবহন বিশেষ ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার চাপে রাজশাহী শহরের সাহেববাজার, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, নিউমার্কেট, শহীদ কামারুজ্জামান চত্ত্বর, তালাইমারী, ঘোষপাড়া, লক্ষীপুর, সিএন্ডবি ও কাজীহাটা ও কোটা এলাকায় রীতিমত যানজট লেগে যায়। অনেকে ঘন্টারপর ঘন্টা ব্যাটারীচালিত রিকশা ও অটোরিকশায় সময় পার করে গন্তব্যে পৌঁছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারফিউ শিথিলের সাথে সাথেই মানুষ বরাবরের মতই ট্রেন চলাচলের বিষয়ে জানতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ভিড় জমান। কিন্তু রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার এমনকি অনুস্ন্ধান পর্যন্ত বন্ধ থাকায় আগ্রহী মানুষ ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যান।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন রাজশাহী থেকে ঢাকায় গড়ে পাঁচ জোড়া, খুলনায় দুইজোড়া, পঞ্চগড়ে একজোড়া, লালমনিরহাটের চিলাহাটিতে দুইজোড়া, গোপালগঞ্জে একজোড়া ও পাবনার ঢালারচরে একজোড়াসহ লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এসব মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে উল্লেখিত ট্রেনগুলো।
মতামতের জন্য মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজারকে পাওয়া যায়নি।
তবে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল করিম ফোন ধরেন। তিনি জানান, বুধবার বিকাল পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত পেলেই তারা জন সাধারণকে তা জানিয়ে দেবেন।
নগরীর সাহেব বাজারের ফুল ব্যবসায়ী মইনুল জানান, গত শুক্রবার থেকে দোকান বন্ধ। গত শনিবার (২০ জুলাই) যখন রাজশাহীতে ফুল এল, তখনই দোকান বন্ধ করতে হলো। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা একটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিলের ঘোষণা এলো। তখন দোকান খুলে দেখি ফুল পচে গেছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এলে সেই ফুল গাড়িতে তুলে দিলাম।’
মঙ্গলবার এভাবেই খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শোনান রাজশাহীর ফুল বিক্রেতা মইনুল। সাহেববাজার এলাকায় ১২ ফুল বিক্রেতার মধ্যে যারা ফুল অর্ডার করেছিলেন, তাদের সবার অভিজ্ঞতা একই। তবে যারা ফুল অর্ডার করেননি তারা নিশ্চিত ক্ষতির শিকার হননি।
মেসেঞ্জার/আনিসুজ্জামান/আপেল