ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

নিহত সাঈদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি

পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২৬ জুলাই ২০২৪

নিহত সাঈদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি

ছবি : মেসেঞ্জার

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ প্রকাশণা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি প্রতিনিধি দল সাড়ে সাত লাখ টাকার চেক তুলে দেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক . তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, কর্মকর্তা এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম।

ব্যপারে প্রক্টর শরিফুল ইসলাম জানান, ভিসি . হাসিবুর রশিদের নির্দেশে সাঈদের বাবা-মায়ের হাতে আমরা এই আর্থিক সহায়তা তুলে দেই। সাঈদের বাবা মায়ের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন।

ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও পরিবারের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল জানান, সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় গভীরভাবে দুঃখিত। আমরা সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসেবে দাবি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাঈদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের পাশে সব সময় থাকবে। শিক্ষকরা থাকবেন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। সে সময় ভিসি আমার সাথে মোবাইলে কথা বলেন। আমাদের খোঁজ খবর নেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। সন্তানকে তো আর ফিরে পাবোনা। আমাদের পরিবারের একজনকে একটা চাকরি দিলে আমরা হয়তো একটু ভালোভাবে চলতে পারব শেষ সময়ে।

সাঈদের পিতা জানান, আবু সাঈদকে পড়ালেখার টাকা দিতে পারতাম না। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় চলতাম আমরা। অথচ সেই সন্তান নেই। পিতা হয়ে সন্তানের কফিন কাঁধে নেয়ার ভাষা আমার নেই। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, দেশের মানুষের জন্য সে জীবন দিয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেয়।

প্রসঙ্গত: মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তখন বেলা পৌনে টা। পুলিশ কোটা আন্দোলনকালীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছুড়ছে গুলি, টিয়ারশেল। আর ছাত্রলীগ হেলমেট পড়ে মুখে গামছা বেধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া দিচ্ছে।

এমন মুহুর্তে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নং গেটের সামনে দাড়িয়ে আন্দোলনকারীদের নেতা আবু সাঈদ পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যে করে বলে আপনারা আমার ভাইবোনের উপর আর গুলি ছুড়বেন না। ওদের মারবেন না।

এরপর দুই হাতে তুলে বলে আপনারা আমাকে গুলি করেন, তবুও ওদেরকে গুলি করবেন না। সাথে সাথে ১নং গেট থেকে পুলিশ তার বুক বরাবর কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। তারপরও কিছুটা সময় দাড়িঁয়ে থাকে সাঈদ।

পরে সামান্য দূরে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাঈদ। শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আবু সাঈদ।

সাঈদ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায়। পিতা মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। এর পর থেকেই নতুন মাত্রা পায় কোটাবিরোধী আন্দোলন।

সন্ধ্যার পরপরই দঃখ শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় বিশ্বিবদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নিহত আবু সাইদের পরিবারের পাশে থাকবে বেরোবি বলে প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযর্ . হাসিবুর রশীদ।

ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৭ জুলাই থেকে আবাসিক হল ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মেসেঞ্জার/মাজহারুল/আপেল

×
Nagad