ঢাকা,  রোববার
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

জামালপুরে ৭ মাসেও চালু হয়নি বন্ধ থাকা সার কারখানা

স্টাফ রিপোর্টার জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২৭ জুলাই ২০২৪

জামালপুরে ৭ মাসেও চালু হয়নি বন্ধ থাকা সার কারখানা

ছবি : সংগৃহীত

জামালপুরের সরিষাবাড়ির তারাকান্দি যমুনা সারকারখানায় গ্যাস সংকটে কারণে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ইউরিয়া সার উৎপাদন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার পথে।

অপরদিকে কারখানার সাথে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এভাবে কারখানা বন্ধ থাকলে সামনে রোপা-আমন মৌসুমে যমুনার সার নির্ভর এ ১৬ জেলায় সার সংকটের শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।

কারখানার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সারকারখানা। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়।

যমুনা সারকারখানায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশর কোম্পানি। এর পর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মুল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানাটি সচল রাখতে না পারলে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
যমুনা সার কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার যমুনার সার উত্তোলন করেন। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকট হওয়ার শঙ্কায় আছে সার ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কৃষক লিমন, মনির, কামাল, মজিবরসহ অনেকেই জানান, যমুনার সার জমিতে ব্যবহারে ফসল বৃদ্ধি পায়। গাছও সতেজ হয়। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসল ভালো হয় না। জমির উর্বরতা কমে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন যমুনা সার কারখানা বন্ধ থাকলে পূর্ব পুরুষের ব্যবহার করা এই সার সংকট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, আমাদের জীবনযাপন অনেক নিম্নমানে চলে গেছে। সেই সাথে কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকলে একসময় চিনি, পাট শিল্পের মতো এ শিল্পও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করছে কারখানার শ্রমিকরা।

তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, কারখানার সাথে জড়িত প্রায় ৩-৪ শতাধিক পরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এ পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে রক্ষার এমনটাই দাবি পরিবহন মালিক  ও শ্রমিক নেতাদের।
যমুনা সারকারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, যমুনা সারকারখানা  এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ লাগে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে এক টন সারের খরচ লাগে প্রায় এক লাখ টাকা। আমদানি নির্ভরতা থেকে সরে দাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখা হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে। এতে বাইরে থেকে সার আনতে সরকারের ভর্তুকি ভার বহন করতে হবে না। কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।

যমুনা সার কারখানার উপ প্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) ফজলুল হক খোলা কাগজকে জানান, গ্যাস সংযোগ না থাকায় দীর্ঘ ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ, কারখানায় বড় ধরনের কোন ত্রুটি নেই, ছোট ছোট যা ছিল তা মেইনটেন্স করা হয়েছে আগেই। গ্যাস পেলে কারখানা চালু করা হবে বলে জানান।

মেসেঞ্জার/দুলাল/আজিজ

×
Nagad