ঢাকা,  বুধবার
১৫ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

শিক্ষার্থী, বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ পথচারীর মৃত্যু, আহত শতাধিক

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২ আগস্ট ২০২৪

হবিগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ পথচারীর মৃত্যু, আহত শতাধিক

ছবি : মেসেঞ্জার

হবিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী, বিএনপি, জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগ পুলিশের সংঘর্ষে হবিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষে মোস্তাক মিয়া (২৬) নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এছাড়াও প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপির কার্যালয় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়- নিহত মোস্তাক মিয়া সিলেট টুকেরবাজার এলাকার মারুফ মিয়ার ছেলে। সে হবিগঞ্জ পিডিবিতে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

হবিগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মমিন উদ্দিন চৌধুরী নিশ্চিত করে জানান- মোস্তাক মিয়ার শরীরে বুলেটের আঘাত বলে মনে হচ্ছে। ডান হাতে একটি গুরুতর আঘাত আছে। পাশাপাশি বুকেও কিছু ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত হলে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানানো যাবে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়- শুক্রবার বাদ জুমা শহরের কোর্ট মসজিদ চত্ত্বর অপর প্রান্তে খোয়াই নদীর তীরে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহরের কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিয়ে আসছিলেন।

এক পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে যোগ দেন। এই মিছিলটি টাউন হল এলাকায় পৌছুলে একই সময়ে চৌধুরী বাজার এলাকার মিছিলটিও টাউন হলে সামনে এসে একত্রিত হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা টাউন হল এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংয়োগ করে।

একই সময় তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির এমপির বাসভবনের সামনে রাখা ৪টি মোটরসাইকেল একটি প্রাইভেট কার পুড়িয়ে দেয়। একইসাথে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা টাউন হল এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতাল, কয়েকটি বিপনী বিতান দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর করে। এরপর পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সময় আন্দোলনকারী পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

একপর্যায়ে শহরের তিনকোণা পুকুর পাড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় মোস্তাক নামে এক যুবক। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মমিন উদ্দিন চৌধুরী মোস্তাককে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের সাথে যোগ দেয় বিজিবি, ্যাব সেনাবাহিনী। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীর নেতৃবৃন্দ জড়ো হয়ে শহরের সিনেমা হল এলাকায় বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পথচারি মোস্তাক মিয়া (২৬) হবিগঞ্জ আবাসিক বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে ঠিকাদার নিয়োজিত শ্রমিক। তার বাড়ি সিলেট জেলার টুকেরবাজার নামক গ্রামের মারুফ মিয়ার পুত্র।

হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন- আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট রওনা দিয়েছিল কিন্তু রাস্তায় সংঘর্ষ চলায় তারা ঘটনাস্থলে যথা সময়ে যেতে পারি নাই।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পুড়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী।

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে আমরা শহরের টাউন হলে আওয়ামী লীগের কর্মসুচি পালন করছিলাম। সময় আন্দোলনকারীদের সাথে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির অংশ নিয়ে অর্তকিতভাবে তাদের উপর হামলা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে।

পরে তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কয়েকটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন জানান- আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ আহত হন। আমরা জনগণের জানমাল রক্ষার্থে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ করি। শহরে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

মেসেঞ্জার/পাবেল/আপেল