ছবি : সংগৃহীত
ফেনীর উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরামে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নয়টি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে অন্তত ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে আটটার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুইটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
এর আগে এদিন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে দক্ষিণ শালধর এলাকায় বাঁধের আরও একটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে মালিপাথর, দক্ষিণ শালধর, নিলক্ষ্মী এবং পাগলিরকূল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত মাসেও বাঁধের একইস্থানে স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল।
দুপুরের দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর এলাকায় একটি ও সাতকুচিয়া এলাকায় দুইটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর, চারিগ্রাম, অনন্তপুর, বাউরপাথর, বাউরখুমা, কোলাপাড়া, বেড়াবাড়িয়া, দুবলাচাদ ও উত্তর গুথুমা এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বিকেলের দিকে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙনের শুরু হয়। এতে কালীকৃষ্ণনগর, পশ্চিম মির্জানগর, গদানগর, উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মনিপুর, ছয়ঘরিয়া, দক্ষিণ কাউতলি, কাশিনগর, চম্পকনগর, দাশপাড়া ও সত্যনগর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান বলেন, এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে পানি ওঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত পার করছি আমরা।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এত পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক সালেহ আহাম্মদ বলেন, টানা দুইদিন মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরের হিসেবে সর্বোচ্চ। আগামী দশদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। এ সময় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের কথা জানান তিনি।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতমাসেও ভারি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী নদীর বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।
মেসেঞ্জার/আজিজ