ঢাকা,  বুধবার
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

নতুন করে দেয়ালে দেয়ালে চলছে গ্রাফিতি অঙ্কন

আহসান সাকিব হাসান, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ১০ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৭:০৮, ১০ আগস্ট ২০২৪

নতুন করে দেয়ালে দেয়ালে চলছে গ্রাফিতি অঙ্কন

ছবি : মেসেঞ্জার

"গাহি সাম্যের গান" বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত এই কবিতার পরের লাইনগুলো হয়তো অন্য কোন দেয়ালে আঁকানো হবে। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।

প্রায় দের যুগ, বাংলার মানুষ স্বাধীনতা পাওয়ার পরেও বাক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে গণমাধ্যমে লেখার স্বাধীনতাও। এতদিন পর গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠে ভেসে উঠছে স্বাধীনতার জয়ধ্বনি।

ব্যস্ততম শহরের রাস্তায় নেই কোন গাড়ির শব্দ, নেই যানজটের প্রবনতা। সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের বাজার গুলোতেও চলছে জোরদার তদারকি। এরই মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে সকল দ্রব্যমূল্যর বাজারদর। বাংলার মানুষ আবারো এক স্বাধীন দেশে বাঁচবে স্বাধীন মুক্ত বাংলায়।

এই স্বাধীন মুক্ত বাংলার পিছনের গল্পে ফিরে আসি। প্রায় এক মাস আগে দেশে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তখন পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫বছর ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রদের কোটা সংস্কার চেয়ে রাজপথে আসার পর সরকারের পুলিশ ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করে।

এরপর ফুঁসে ওঠে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। কোটা আন্দোলনে দাবি বাড়ানো হয়, মাঠে নামে বিজিবি, র‍্যাব, সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করে অনেক ছাত্রদের হত্যা করা হয়।

এরপর শিক্ষার্থীদের আহ্বানে ৪ আগস্ট দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্রদের সাথে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রম পেশার মানুষ। রাত পেরোতেই ৫ আগস্ট লং টু মার্চ। পরিকল্পনা ছিলো গনভবন ও সংসদ ভবনে যাওয়ার। লং টু মার্চ এই মিশনে ছাত্রদের ডাকে সারা দেওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি জানতে পেরে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর সারাদেশে ছাত্রদের উল্লাস আর উন্মাদনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। উল্লাস আর উন্মাদনার কমতি ছিল না পাড়া মহল্লার পথে প্রান্তরে সাদামাটা মানুষগুলোর মুখে।

কিন্তু সুযোগ সন্ধানী কিছু দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালিয়েছে। অনেক সাধারন মানুষ, ছাত্র ও পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন থানা। পরবর্তীতে কর্ম বিরতিতে যায় পুলিশ সদস্যরা।

এমন এক পরিস্থিতিতে দেশে নেই কোন সরকার, নেই প্রশাসন। এগিয়ে আসে আন্দোলন করা সেই ছাত্ররা ও ছাত্র সংগঠনগুলো।

হাতে পলিথিনের ব্যাগ ও ঝাড়ু নিয়ে দায়িত্ব নেয় রাস্তা ঘাট থেকে দেশ পরিস্কার করার, কুরচিপূর্ণ মন্তব্য মুছে ফেলে বিভিন্ন শব্দে গ্রাফিতি আঁকা ও যানজট নিরসনে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা।

"গাহি সাম্যের গান" বিদ্রোহী কবির এই কবিতার অংশটি লিখছে বরিশালের বাউফল উপজেলার চাঁদকাঠি গ্রামের মেয়ে রাশিকা আলম (১৭)।

তিনি বলেন, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। শুধু রাশিকা নয় তার সহপাঠী সহ আরও অনেকেই ছিলো গ্রাফিতি অঙ্কনে। গায়ে পরিহিত সবুজ রঙ্গের টি-শার্টটি লাল সবুজ সোসাইটি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই সংগঠনের শত শত শিক্ষার্থী। সংগঠনের নির্দেশনার পর আন্দোলনে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক কাজে তৎপর ছিলো শিক্ষার্থীরা।

সরকার দেশত্যাগের পর গণভবনের আশপাশের এলাকা সহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ রংপুরসহ আরও প্রায় ১৫ টি জেলা জুড়ে গ্রাফিতি আঁকা শহর পরিষ্কার অভিযান ও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে এসব স্বেচ্ছাসেবী ভলান্টিয়ার শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে যেমন ছিলো শৃঙ্খলা ঠিক তেমনি দেশের একজন সু-নাগরিকের দায়িত্ববোধ।

"গাহি সাম্যের গান" গ্রাফিতি আঁকা রাশিকা আলম (১৭) বলেন, এই কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অন্যতম একটি কবিতা। এর দ্বারা নারী-পুরুষের সমানাধিকার বুঝানো হয়েছে। সভ্যতার সাথে সাথে পুরুষের পাশে নারীরাও এগিয়ে এসেছে, নিজেদের সফলতার শিখরে নিয়ে গেছে। সামনে দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে সবাই একসাথে ভেদাভেদ বিহীন দেশ গড়ে তুলবে।

ঢাকার সংসদ ভবন এলাকার পাশে শহর পরিস্কার ও গ্রাফিতি আঁকে আজিজুন তমা (২৫) তিনি বলেন, সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে দেশের এবং মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে আরো তীব্র হয়। এতদিন অসহায়, উন্নয়নের কাছে না পৌছানো মানুষদের জন্য কাজ করেছি, নিজের পরিবেশ সুন্দর রাখা, পরিবেশের ভারসাম্য বজায়ে কাজ করেছি।

কিন্তু কিছু আগে ঘটে যাওয়া আন্দোলনে অনেককে সমস্যার মুখে পড়তে হয়, আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্যতা লোপ পায় এমন সময় আমরা মানুষের সুরক্ষার জন্য, আমাদের দেশকে নতুনভাবে এগিয়ে নিতে গ্রাফিক্স, ট্রাফিকের কাজ, বাজার মনিটরিং এর কাজগুলো করে যাচ্ছি।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে শুধু লাল সবুজ সোসাইটি নয় শত শত সংগঠনের তরুণ-তরুণীদের হাতে নতুন বাংলাদেশের এক উদ্ভাবনী স্বপ্ন আঁকা হচ্ছে। যে স্বপ্নের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রমজীবী সহ দেশের সকল মানুষ।

এর আগে আন্দোলন করা ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ৮ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথ গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয় ১৬ জনকে। এদের মধ্যে দু'জন আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করা সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব।

মেসেঞ্জার/আপেল