ঢাকা,  বুধবার
১৫ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ ভিসি বাসেতের পদত্যাগ চান শিক্ষার্থীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৭ আগস্ট ২০২৪

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ ভিসি বাসেতের পদত্যাগ চান শিক্ষার্থীরা

ছবি : মেসেঞ্জার

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি মহিবুল হাসান নওফেলের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হকৃবি) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. আবদুল বাসেতের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

সদ্য প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে আবদুল বাসেতের ওপর শুরু থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও আবদুল বাসেত এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যা নিয়ে শিক্ষার্থী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ভিসির পদত্যাগের দাবী করেছেন অনেকে।

সুজন চৌধুরী নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। যে কারণে বিগত সরকারের নেতাদের দুর্নীতির সাথে জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভিসি প্রফেসর মো. আবদুল বাসেত। দুর্নীতিবাজ ভিসির অধীনে কখনো শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না। অবিলম্বে ভিসির পদত্যাগ করা উচিত। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে তার পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে।

রুবেল আহমেদ বলেন, বাসেত নির্লজ্জের মত ভিসি পদ আঁকড়ে আছেন। হবিগঞ্জের সকল শিক্ষার্থী সচেতন লোকজন তাকে পদত্যাগের কথা বললেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। তিনি বিগত সরকারের দুর্নীতি ঢাকতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো আবদুল বাসেতের প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না যেতে ভয়-ভীতি দেখিয়েছিলেন তিনি। আমরা চাই ভিসি পদ থেকে তিনি এখনই পদত্যাগ করেন। অন্যথায় তার কার্যালয় ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি জানতে ভিসি মো: আবদুল বাসেতের সাথে কথা বলার জন্য অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ভিসি বাসেতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা কোন যোগাযোগ করতে পারছি না।

গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে ৮০ জনের নিয়োগ নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। নিয়োগ পরীক্ষা হবিগঞ্জে না হয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। কোন প্রবেশপত্র না দিয়ে পরীক্ষার একদিন আগে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতে পরীক্ষায় প্রবেশের আগমূহুর্তে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়।

জানুয়ারির সোমবার (২৯ তারিখ) ঢাকায় এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৯ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার ফার্মগেটের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সিন্ডিকেট সভায় এসব পদে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন উপাচার্য প্রফেসর মো. আবদুল বাসেত।

এই ঘোষণার পরদিনেই নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানও সম্পন্ন করেন ওই বিতর্কিত ভিসি। এই পরীক্ষায় আবেদন করেও অনেকে ডাক পাননি। যে কারণে বিষয়টি চাউর হয়।

ওই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক প্রভাষক পদে ৩৩ জন, সহকারী প্রকৌশলী উপসহকারী প্রকৌশলী পদে , সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ প্রকাশনা) পদে , প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে , সেকশন অফিসার পদে , অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে , ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে , ইলেকট্রিশিয়ান পদে , ক্যাটালগার পদে , ফটোকপি অপারেটর পদে , উপ-সহকারী খামার তত্ত্বাবধায়ক পদে , বাবুর্চি পদে , এটেনডেন্ট পদে , ফটোগ্রাফার পদে , অফিস সহায়ক পদে ১৪, নিরাপত্তা সুপারভাইজার পদে , সুপারিনটেনডেন্ট পদে জনসহ মোট ৮০ জনকে নিয়োগ দেন ভিসি আবদুল বাসেত।

এসব পদে শত-শত চাকরিপ্রত্যাশী আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

জামাল আহমেদ হিমু নামে একজন চাকরি প্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবার নিজের টাকা দিয়ে আবেদন করলাম। কিন্তু একবারও পরীক্ষার সুযোগ দিল না। কিন্তু তাদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ। ভিসির কারণে আমার মত শত-শত আবেদনকারী পরীক্ষার সুযোগও পাননি।

২০১৯ হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০২০ সালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাদৈ নামক স্থানে ভাড়া করা স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচটি অনুষদ নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।

মেসেঞ্জার/পাবেল/আপেল