ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ : অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ২৪ আগস্ট ২০২৪

শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ : অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া

ছবি : মেসেঞ্জার

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এবং বিএনপি কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। তাদেরকে আর এখানে আসতে দেওয়া হবে না।

আগামী ১০০ বছরেও কেউ আওয়ামী লীগের নাম নিবে না। তার বাবার মৃত্যুর পর যেরকম ইন্নালিল্লাহি পড়ে নাই, সেই আওয়ামী লীগ আগামী ১০০ বছরেও এদেশে আসবে না। এই দেশটা আমাদের, আমাদেরকে দেশটা গড়তে হবে। বিএনপি হলো এদেশের পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর অভিভাবক।

রাজনৈতিক অভিভাবক বিএনপি। তাই, বিএনপিকে এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আমাদের কি ক্ষোভ নাই? আমাদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, সেসব ভুলে গিয়েছি। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে আমরা পরবর্তী সরকার গঠন করব এবং এদেশের জনগনের পাশে থাকবো। দেশটাকে আবার গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ অডিটরিয়ামে গাজীপুর জেলা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, সরকারের কোনো দল নাই। তারা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করে যাবে। সরকার যেহেতু একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করে যাবে সেজন্য আমরা সরকারের পেছনে আছি।

তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করে যাচ্ছি। যতদিন নির্বাচনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি না হবে, ততোদিন অমরা তাদেরকে সহযোগীতা করে যাব। আমরা সবাই মিলে সরকারকে সহযোগীতা করবে।

আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ যেভাবে গড়ে তুলেছিল তাদের কয়েকজন পালিয়ে গেলেও বাকিগুলো রয়ে গেছে। যেকোন সময় তারা সরকারকে ফেলে দিতে পারতো।

হাসিনার বাবাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। শেখ মুজিবকে গুলি করে হত্যার কারনে মৃত্যু যন্ত্রনা কি তা সে বুঝে নাই। হাসিনা থাকলে বুঝতো মৃত্যু যন্ত্রনা কি জিনিস। তাকে রাজপথে টাঙ্গিয়ে মানুষ পাথর নিক্ষেপ করে মারতো। অথবা তাকে সুইচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতো। মানুষ তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ছেড়ে দিতো।

তিনি বলেন, কারিকুলাম যেগুলো দিয়েছে, সেগুলো বারবার গবেষনা করতে করতে শেষ করে দিয়েছে। আসলে তো এরা লেখাপড়া জানে না। ইসকনের উপদেষ্টা হলো নওফেল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার নামে যেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো সেগুলো একটা অর্ডার দিয়ে সব বাদ করে দিয়েছে। যেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উনাদের নামে ছিল আমাদের দাবী সেগুলো প্রতিষ্ঠানে তাদের নাম আবার বসাতে হবে।

উপস্থিত শিক্ষকদেও উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শেখ পরিবারের নামে যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে মুছে ফেলেন, মুছে ফেলেন। না মুছলে এটার পরিণতিও খারাপ হবে। এটা করতে গেলে আপনাদের যদি কোন সমস্যা হয় সেটা আমি দেখবো। দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য আমরা শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলাম আগামী মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) যেহেতু দেশের কয়েকটি অঞ্চল এখন বন্যা কবলিত তাই আমাদের পূর্ব নির্ধারিত ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী তারিখ জানাব।

চাকরি জাতীয়করণ করতে হলে একটি টাকাও লাগবে না। সরকারকে আমরা হিসেব দিয়ে আসছি। বেগম খালেদা জিয়া বলেছিল তোমার লোক যারা চাকুরিচ্যুতি হয়েছে তাদেরকে ক্ষতিপূরণসহ তাদের চাকিরি ফিরিয়ে দিবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা এবং সংগঠনের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন বলেন, খুনি হাসিনা পৃথিবীর মানচিত্রে ফ্যাসিস্ট সরকারে নিবন্ধিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্র তাকে জায়গা দিচ্ছে না। খুনি হাসিনা আসো, বাংলাদেশে এসে তোমার ক্ষমতা থাকলে আবার তুমি রাজনীতি করো। তুমি না বলেছিলে বাংলাদেশ তোমার বাবার দেশ। এদেশে থেকে শেখ হাসিনা পালায় না। কেন তুমি পালিয়েছো? কারণ, এই শিক্ষক সমাজ এমন একটি প্রজন্ম গড়ে তুলেছে যে প্রজন্ম তোমাকে টেনে হেঁচড়ে তোমার মসনদ থেকে নামিয়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের প্রমোশন বঞ্চিত করেছে। গত ১৫ বছরে কেউ বলতে পারবেন যারা ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগীতা করেনি এরকম কেউ প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছেন? হতে পারেননি। তাই আমরা মাননীয় উপদেষ্টার কাছে বলেছি আমাদের নিয়োগবিধি পরিবর্তন করতে হবে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক হতে হবে এই নিয়োগব্যাধী আমরা মানি না। শুধুমাত্র ১২ বছর যাদের চাকরির অভিজ্ঞতা হয়েছে তারাই কলেজের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল এবং তারই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হতে পারবে।

শিক্ষক-কর্মচারী নির্যাতনকারী ম্যানেজিং কমিটি ইতোমধ্যে ভেঙ্গে দিয়ে ডিসি এবং ইউএনও পরিচালনা করছে। অবিলম্বে চাকুরিচ্যুতি শিক্ষকদের পুনর্বহাল করতে হবে। যেসমস্ত ডিসি এবং ইউএনও চাকুরিচ্যুতি শিক্ষকদের বহাল করবে না তাদেরকে আমরা সেই জেলা বা উপজেলায় কর্ম করতে দেব না।

শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট তাদের তালিকাভুক্ত করে তাদেরকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য করব আমরা। আমরা দুর্ণীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। যেখানে শিক্ষকদের হয়রানি করবে না, তাদের কাজে পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে এরকম একটি প্রশাসন অমরা গড়ে তুলতে চাই। সকল বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, কলেজ এবং স্কুল ইন্সপেক্টরের অপসারণ চাই। যদি তারা ইতোমধ্যে পদত্যাগ না করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।

গাজীপুর জেলা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আহবায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আক্তারুল আলম মাষ্টারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা দেলোয়র হোসেন, বাংলাদেশ মাধ্যামিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মু: মোকলেসুর রহমান।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- গাজীপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব আহাম্মদ আলী, কলেজ শিক্ষক সমিতির আহবায়ক হুমায়ুন কবির, সদস্য সচিব অধ্যাপক নাজমুল হুদা লিটন, গাজীপুর জেলা মাদরাসা শিক্ষক সমিতির আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

মেসেঞ্জার/সাদ/আপেল