ঢাকা,  বুধবার
১৫ জানুয়ারি ২০২৫

The Daily Messenger

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

অংবাচিং মারমা, (রুমা) বান্দরবান

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৮ আগস্ট ২০২৪

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

ছবি : মেসেঞ্জার

বান্দরবানে রুমা উপজেলায় নং পাইন্দু ইউনিয়নের- নং ওয়ার্ডের পাইন্দু হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরুর দায়িত্বে থাকা পেশায় একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করে রুমা বাজারে দোকান দিয়ে বিকাশে টাকা লেনদেনের ব্যবসা করে আসছেন প্রধান শিক্ষক।

পাইন্দু হেডম্যান পাড়াবাসীরা বলেন, মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রোগ্রামেও বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন এই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আল আমিন।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার একটি দোকানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব কথা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আল আমিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি এতটাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর দায়িত্বহীন যে, জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করেননি। স্কুল বারান্দায় অগোছালো কাপড় টাঙানো অবস্থা। তবে তিনটি কক্ষে তিনজন শিক্ষক পাঠদানের অবস্থা দেখা মিলে।

সময় দেখা মিলে ইউএনডিপি থেকে দুইজন নিয়োগ প্রাপ্ত পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণের শেষে সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। এই দুই জনের মধ্যে একজনের নাম প্রুচিং থোয়াই মার্মা।

তিনি জানান, প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বিদ্যালয়ে চার মাসের জন্য পাঠিয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) সাবেক সভাপতি ছোহ্লা মং মারমা বলেন, এই আগস্ট মাসে প্রধান শিক্ষক আল আমিন এই পর্যন্ত মাত্র একদিন দুপুরে এসেছিলেন। তখন বিদ্যালয় পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ওয়াশরুম নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে এসেছিলেন। ঐদিনও কোনো ক্লাস না করে চলে গেছেন প্রধান শিক্ষক।

তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে থেকে ১৭ তারিখের মধ্যে বিদ্যালয়ে মাত্র পাঁচ দিন এসেছিলেন। বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় অনুপস্থিতি সহ নানান অনিয়ম করে যাচ্ছে। যা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বড়ই ক্ষতিকর।

২০২৪ সালে বিদ্যালয় মেরামত কাজের জন্য বরাদ্দ বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। গত ৩০ জুনের আগে চেক শুধু সভাপতির সীল দিয়ে কোনো কিছু লেখা ছাড়াই প্রধান শিক্ষক তাঁকে স্বাক্ষর দিতে বলে। ওই চেক দিয়ে কত টাকা উত্তোলন করেছেন তা জানতেন না সাবেক সভাপতিও।

তিনি আরো বলেন, ৩০ জুনের মধ্যে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে স্কুলে মেরামত করে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড়মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজ শেষ করেননি।

সাবেক সভাপতির সাথে আলাপ আলোচনা শেষ না হতেই ওই দোকানে বসে থাকা পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার কারবারী থোয়াইসা মারমা (৬৬), ক্যহ্লাচিং মারমা (৫০), ক্যহ্লাথোয়াই (৩৫) উবাসিং মারমা (৩৫) সহ আরো অনেকে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে কয়েক বছর থাকার পর অন্যত্র বদলী চলে গিয়েছিল আল আমিন। ওই সময়েও নিয়মিত আসতেন না।

আবার ঘুরে ফিরে গত বছর তাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। এটা পাইন্দু পাড়াবাসীর জন্য খুব দু:খজনক বলে উল্লেখ করেন পাড়ার প্রধান (কারবারী) থোয়াইসা মারমা।

তিনি বলেন, ধরনের শিক্ষক ১০০ জন থাকলেও পাড়াবাসীর ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় কোন উপকারে আসবে না।

পাড়াবাসীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার চলাফেরা। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মিত উপস্থিতি ব্যাপারে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিস।

খাতায় দিন তারিখ লিপিবদ্ধ করে রাখা লেখা দেখিয়ে সাবেক সভাপতি ছোহ্লামং মারমা আরও জানান, তিনি সভাপতি থাকাকালীন ২০২৩ সালে ৭ জুলাই কৃষি ব্যাংক থেকে পনেরো হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এটাও কোনো কাজ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় মেরামত কাজের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। এটা ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় কিস্তি ২১ হাজার পাঁচশ টাকা উত্তোলন করে প্রধান শিক্ষক।

তবে এর আগে দুই কিস্তি সভাপতি স্বাক্ষর ছাড়া টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। স্বাক্ষর জাল করে টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন এমন অভিযোগও জানিয়েছেন সাবেক সভাপতি।

জানতে চাইলে পাইন্দু হেডম্যান পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আল আমিন বলেন, পাড়াবাসীরা তো বিদ্যালয়ে পড়ায় না। তাই প্রতিদিন আমি স্কুলে যায় কিনা সেটা কেমন করে অভিভাবকেরা জানবে। কথাগুলো বলে এড়িয়ে যান।

ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, জুলাই মাসে রাজনৈতিক কারণে বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এছাড়া অন্য বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

মেসেঞ্জার/আপেল