ছবি : মেসেঞ্জার
রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিক প্রলোভন ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাবের অভিযোগে পদার্থবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিলকে কলেজ থেকে প্রত্যাহার চেয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দরা। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রফেসর জাহেদা সুলতানা স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে রাঙমাটি সরকারি কলেজ শাখার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি সুনীতি চাকমার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সজল চাকমাসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাঙামাটি সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন এক অত্যাবশ্যকীয় নারী কর্মচারীর সাথে কলেজেরই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিলকে অনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়।
সেসময় কলেজের তৎকালীন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক দায়িত্ব থাকায় মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল আর্থিক সুবিধা ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে ওই প্রাক্তন কর্মচারীর সাথে প্রায় সময়ই আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং আকার-ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব প্রদান করতেন।
এক পর্যায়ে ইব্রাহিম খলিলের কুরুচিপূর্ণ আচরণে উক্ত নারী কর্মচারী চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হয়। চাকুরী থেকে অব্যাহতির পরও ইব্রাহিম খলিল বিভিন্ন মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে ওই শিক্ষার্থীর কোনো ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্বেও ইব্রাহিম খলিল মাঝে মাঝে তার গ্রামের বাড়িতে যেতেন। ইব্রাহিম খলিলের থেকে রক্ষা পেতে নিজের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
রাঙমাটি সরকারি কলেজ শাখার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি সুনীতি চাকমা বলেন, (১৬ আগস্ট) তারিখে মৌখিক দাবির প্রেক্ষিতে রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আগস্ট মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন এবং প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত জনাব মোঃ ইব্রাহিম খলিলকে সকল ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার জন্য উপস্থিতি শিক্ষকবৃন্দ ঐক্যমত পোষণ করেন।
বলাাহুল্য, কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্তের মুখে অভিযুক্ত মোঃ ইব্রাহিম খলিল কলেজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ঘটনার সকল দায় নিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলে যাওয়ার জন্য (৫ সেপ্টেম্বর) কলেজ অধ্যক্ষের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার নিকট স্বীকাক্তারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
কলেজের সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে এবং স্বাভাবিক পরবর্তীতে যাতে কোন কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী এ ধরণের আপত্তিকর আচণের শিকার হতে না হয় সেজন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিলকে কলেজ থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন অভিযুক্ত পদার্থবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি দাবি করেন, ‘ তাকে আমি কখনও অর্থনৈতিকভাবে প্রলোভন ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিইনি। তবে তার মায়ের অসুস্থতার সময়ে আমি এবং আমার স্ত্রী মিলে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। তার সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিল না। আমি কখনও তার বাড়িতে তার কাছে যায়নি। স্মারকলিপিটা দেখেছি। স্মারকলিপিতে যা উল্লেখ আছে সবকিছু মিথ্যা।’
রাঙামাটি সরকারি প্রফেসর জাহেদা সুলতানা বলেন, ‘কলেজের পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিলকে প্রত্যাহার চেয়ে আজকে ছাত্ররা একটি লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপি গ্রহণের পর নিয়মানুযায়ী যা যা করা প্রয়োজন তা আইনানুগভাবে করা হবে।
তবে এ বিষয়ে সমাধানের জন্য এর আগে দুই পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। খলিলের এ বিষয়টি প্রায় দুই বছর আগের ঘটনা। ওই প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক ইব্রাহিম খলিলের পারিবারিকভাবে সর্ম্পক ভালো ছিল তার সত্যতা পাওয়া গেছে।’
মেসেঞ্জার/সুপ্রিয়/তারেক