ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩১ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

ছাত্র জনতার আন্দোলন

পুলিশের ছোড়া ককটেলে হাতের কব্জি হারালো ভ্যান চালক

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশের ছোড়া ককটেলে হাতের কব্জি হারালো ভ্যান চালক

ছবি : মেসেঞ্জার

ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ককটেল বোমায় হাতের কব্জি হারালো ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভ্যান চালক মো. নুর হোসেন।

বাম হাতের কব্জি হারিয়ে চিকিৎসার অভাবে গ্রামের বাড়িতে পড়ে থাকা নুর হোসেন তিন বছর আগে ঢাকায় গিয়ে জুরাইন পাটের বাগ এলাকায় ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হত তা দিয়ে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ের সংসার চালাতো। স্বপ্ন ছিল টাকা রোজগার করে বাড়িতে এসে বিবাহ দিবেন ১৮ বছর বয়সি বড় মেয়ে মিতুকে। কিন্তু এক মুহুর্তেই সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে নুর হোসেনের।

প্রতিদিনের মতই ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলো নুর হোসেন (৫ আগস্ট) শনিবার দুপুর দেড়টায় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসতেই ছাত্র জনতা ও পুলিশের গোলাগুলি শুরু হয়। নূর হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক সরকার পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের আগ মুহূর্তেও থেমে থাকেনি পুলিশ। একের পর এক গুলি ও ককটেল বোমায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া শত শত ছাত্র জনতাকে আঘাত করেছে তারা।

নুর হোসেন বলেন, চোখের সামনেই একাধিক ছাত্রভাইয়ের মরদেহ দেখেছি। এসময় ছাত্র জনতার আহবানে গণ আন্দোলনে শরিক হই আমিও। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আসতেই গোলাগুলির একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া ককটেল এসে আমার দুই রানে পরলে আমি বাম হাত দিয়ে ওই ককটেল সরানোর চেষ্টা করি এসময় অসাবধানতা বসত ককটেলটির বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বাম হাত ও দুই রানসহ আমার সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন বিধ্বস্ত হয়।

এসময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া অপর ভ্যান চালকরা আমাকে উদ্ধার করে যমুনা জেনারেলের হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাতের কব্জি ৯৫শতাংশ বিকল হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক কব্জি কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে হাতের কব্জি কেটে ফেলতে বাধ্যা হই।

তিনি বলেন, প্রায় এক মাস ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছিনা এদিকে মেয়ে বড় হয়েছে। আশা ছিল ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে বড় মেয়ে মিতুকে (১৮) বিবাহ দিবো, আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সারা জীবনের জমানো সব কিছুসহ দারদেনা করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার চিকিৎসা করেছি। এখোনও অনেক টাকার প্রয়োজন তাই বর্তমান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

স্বজনরা জানান, এখনও তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন কিন্তু পরিবারের পক্ষে তার চিকিৎসা চালানো অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে এজন্য সরকার ও বিত্তবাদের এগিয়ে আসার আকুতি জানান তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরিন হক জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা করে ইতি মধ্যেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ওই আন্দোলনে আরও কেউ আহত বা নিহত থাকলে আমাদের জানালে তাদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং জেলা প্রশাসক তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।

মেসেঞ্জার/সাইফুল/তারেক