ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩১ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

দুই যুগ ধরে অচল সৌদি সাহায্য পুষ্ট হাসপাতাল

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুই যুগ ধরে অচল সৌদি সাহায্য পুষ্ট হাসপাতাল

ছবি: মেসেঞ্জার

দুই যুগের বেশি সময় পার হলেও অচলাবস্থায় রয়েছে সৌদি সাহায্য পুষ্ট ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। হাসপাতালটির অবস্থান ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানা এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় দক্ষিণ আইচা থানা এলাকার লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নত চিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি চারতলা ভবন ও চারটি কোয়ার্টার সহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি, ডেন্টাল ইউনিট, এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার এবং চারজন ডাক্তার নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ২০ শয্যা সৌদি হাসপাতালটির।

কিছুদিন স্বাস্থ্যসেবা চলার পর বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। পরবর্তীতে হাসপাতালটির কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তাদের চাকুরী রাজস্ব খাতে হস্তান্তর সহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করেও অনুমোদন মেলেনি। পরে তাদের মধ্যে অনেকে চাকরি ছেড়ে অনত্রে চলে গেছেন। হাসপাতালটিতে ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে আন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বর্তমানে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ মোট ৩২ টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে রয়েছেন ডাঃ হুমায়ুন কবির। মেডিকেল অফিসার পদে রয়েছেন ডাঃ তালহা সামিউল হক। অফিস সহকারী পদে রয়েছেন হাবিবুল হক হাবিব।

এছাড়া ওয়ার্ড বয় পদে রয়েছেন মো. নিরব, ও মো.বশির। কু মশাল সি পদে রয়েছেন আঞ্জুমান বেগম, আয়া পদে রয়েছেন রুজিনা বেগম, নৈশপ্রহরী পদে রয়েছেন মো.শহিদ, পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে রয়েছেন মো. কামাল হোসেন। বাকি ২৩ টি পদ শূন্য রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসাপাতালটির সীমানা প্রাচীরের গ্রিল ও মূল ভবনের ভিতরে বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভাঙ্গা এবং জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। দোতলায় শৌচাগার নোংরা হয়ে আছে। পরিত্যক্ত কক্ষগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। তিনতলায় গেট বন্ধ থাকায় ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। রুমে ও ছাদে সিগারেটের টুকরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলো সম্পূর্ণ ব্যবহারের অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।

হাসপাতাল ভবনের নিচ তলায় এবং আবাসিক ভবনগুলো মাদক ও জুয়াখোরদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এলাকার কিশোরদের টিক-টক শুটিং ভিডিও করতে দেখা যায়। আবাসিক ভবনগুলোর দরজা ভাঙ্গা দেখা যায়। একটি বৈদ্যুতিক খুটিও ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালটির চারপাশে খালি জায়গাগুলো ঝোঁপ-জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। এ যেন একটি ভুতুড়ে পরিবেশ।

হাসপাতালটি অপরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মী মো. কামাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, হাসপাতালটি নিয়মিত পরিস্কার করা হয় ঠিকই। কিন্তু হাসপাতালটি খোলা টাইমে কিছু বখাটে পোলাপান ভিতরে প্রবেশ করে নোংরা করে ফেলে। যার জন্য কিছু জায়গায় অপরিষ্কার রয়েছে।

হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন বৃদ্ধ আয়াতুন নেছা নামে এক রোগী তিনি জানান, আমার বাত-ব্যাথা এবং আমার নাতনি জোহানার (৪) এর সর্দি, কাশি হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। হাসপাতালে ডাক্তারকে না পাওয়ায় চলে যাচ্ছি।

জয়নাল নামে এক রোগী জানান, আমার দীর্ঘদিন পর্যন্ত গ্যাস্টিকের জ্বালাপোড়া ডাক্তার দেখাতে এসেছি হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নাই তাই পল্লী চিকিৎসককের কাছে যাচ্ছি।

স্থানীয় সেবাগ্রহীতারা জানান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হুমায়ুন কবির হাসপাতালে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও গত কয়েক মাসে তিনি হাসপাতালে আসেন নাই। লালমোহন নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানেই রোগী দেখেন তিনি। এছাড়া মেডিকেল অফিসার ডাঃ তালহা সামিউল হককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হইতে এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু তিনি রোগী দেখেন দক্ষিণ আইচা একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বর্তমানে অফিস সহকারী হাবিবুল হক পুরো হাসপাতালটি দেখাশোনা করছেন। বাকি কর্মচারীরা হাসপাতালে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে তারা নিজেরা বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে সেখানে সময় দিচ্ছেন।

হাসপাতালের অফিস সহকারী হাবিবুল হক হাবিব জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বহিঃবিভাগে দৈনিক ৪/৫ জন রোগী আসেন প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালের ভিতরে বর্তমানের বেহাল অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞেসা করা হলে কোনো মন্তব্য করেননি।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক হাছনাইন, মিজান মীর ও  ব্যবসায়ী জুলফিকার তালুকদার সহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, এই এলাকার মানুষজন অসুস্থ হলে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাসন উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। হাসপাতালটি চালু থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা. ইউনূস এর কাছে হাসপাতালটি রাজস্ব খাতে নিয়ে জনবল নিয়োগ দিয়ে উপকূলীয় এলাকার অবহেলিত লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালটি চালুর দাবি জানান তারা।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ হুমায়ুন কবিরকে মুঠোফোনে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মাত্র কোনো সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দেয়া হলে রিসিভ করেননি।

ভোলা সিভিল সার্জন ডাঃ কে এম শফিকুজ্জামান জানান, ওই হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ জনবল সংকট নিরসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে জানানো হবে। চিঠির জবাব পেলে আশাকরি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালটির শয্যা চালু করা সম্ভব হবে।

মেসেঞ্জার/সাইফুল/আজিজ