ঢাকা,  শনিবার
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

জাবিতে শামীম হত্যায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৮:৪৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাবিতে শামীম হত্যায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক

ছবি : মেসেঞ্জার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ধামরাই কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক। এর আগে, আজ ভোর রাতে ঢাকার ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

নিহত শামীম মোল্লা আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার মোল্লা বাড়ির ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯ ব্যাচ) ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একাধিক (ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদক) মামলা রয়েছে।

আটক হাবিবুর রহমান হাবিব ধামরাই পৌর এলাকার মোকামটোলা এলাকার লাবু খানের ছেলে এবং ধামরাই কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।

শামীম হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সুদীপ্ত শাহিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন (নং- ৪৪/৬০৭)। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেনকে। মামলা দায়েরের খবরে গা ঢাকা দিয়েছেন অন্য আসামিরা।

মামলার এজাহার ভুক্ত আসামিরা হলেন- জাবির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের মোহাম্মদ রাজন মিয়া (২৫), একই বিভাগের ৪৫ ব্যাচের রাজু আহাম্মদ (২৫), ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের হামিদুল্লাহ সালমান (২১), সিএসই বিভাগের ৪৭ ব্যাচের সোহাগ মিয়া (২৩), বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আহসান লাবীব (২৪), ইংরেজি বিভাগের মাহমুদুল হাসান রায়হান (২০), ইতিহাস বিভাগের জুবায়ের আহমেদ (২৪), ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৯ ব্যাচের মো. আতিকুজ্জামান আতিক (২১) কে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলায় আসামি করা ওই আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মারধরের ঘটনায় শনাক্ত হওয়া সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে অব্যাহতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইটে এলে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে মারধর করেন। খবর পেয় প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। আহত শামীমকে প্রক্টর কার্যালয়ের একটি কক্ষে রেখে প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আশুলিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এর মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে না জানিয়ে জোর করে শামীম মোল্লাকে প্রক্টর কার্যালয়ের পাশে নিরাপত্তা কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রক্টর বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। পরে সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারায় রেখে প্রক্টরের কার্যালয়ে ফিরে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে পুনরায় কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে নিরাপত্তা কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে শামীম মোল্লাকে আবারও মারধর করেন।

এজাহারে আরো বলা হয়, পরে প্রক্টরিয়াল টিম ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা শামীম মোল্লার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের থামান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ সদস্যরা এসে জানান, শামীমের নামে একাধিক মামলা আছে। রাত আটটার দিকে শামীমকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে শামীমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত নয়টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

মামলার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সুদীপ্ত শাহীন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছি৷ পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে৷ ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুবকর সিদ্দিক বলেন, জাবিতে গণপিটুনিতে শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাবিবকে আটক করা হয়েছে। ভোরে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি আশুলিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ বা বিভিন্ন তথ্যের জন্য একজনকে (হাবিবুর রহমান হাবিব) আশুলিয়া থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা অপরাধী তাদের জন্য তো কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই।

মেসেঞ্জার/নোমান/আজিজ

×
Nagad