ঢাকা,  মঙ্গলবার
২২ অক্টোবর ২০২৪

The Daily Messenger

দরিদ্র মায়ের ভাতা’র তালিকায় চেয়ারম্যানের ৫ পরিবারের সদস্য

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দরিদ্র মায়ের ভাতা’র তালিকায় চেয়ারম্যানের ৫ পরিবারের সদস্য

ছবি : মেসেঞ্জার

ভাই-ভাগ্নীসহ চেয়ারম্যানের পরিবারে ৫ জনের নামে হতদরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা'র তালিকা পাওয়া গেছে। অনেক উপকারভোগী হলেন ঢাকা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলার বাসিন্দার নাম। ১-৩ বছর বয়সী বাচ্চার মায়ের নামে হয়েছে কার্ড। কার্ড প্রতি ঘুষ দিতে হয়েছে ১.৫-২ হাজার। অপর দিকে সুবিধাভোগীদের তথ্য গোপনের মাধ্যমে দারিদ্রতা দেখিয়ে করিয়ে দিচ্ছেন এই মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা।

অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা'র তালিকায় দেখা গেছে রঞ্জুয়ারা, ফাতেমা, রেহেনা খাতুন, মোসলেমা, ফারজানা আক্তার, বকুল বেগম এর নামের তালিকায় পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তালিকায় থাকা দুই সন্তানের রঞ্জুয়ারা’র এক সন্তানের বয়স ৫ বছর আরেক সন্তানের বয়স ৮ বছর। গর্ভে বাচ্চা না থাকলেও পেয়েছেন মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা। জানা গেছে স্বামী হাবিবুর রহমান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিনের চাচাতো ভাই।

এছাড়া তালিকায় রয়েছে চাচাতো ভাই মিল্টন ইসলাম এর স্ত্রী ফাতেমা বেগম, ফাতেমা বেগম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় তার বাবার গ্রামের বাসায় থাকেন তিনি। চেয়ারম্যানের বড় বোনের মেয়ে রেহেনা খাতুন, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় তিনি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার স্বামী শরিফ উদ্দিনের বাড়ীতে থাকেন।

আরেকজন উপকারভোগী চেয়ারম্যানের মোসলেমা আক্তার দুর-সম্পর্কে আত্মীয় ছকমল হোসেন এর কন্যা, তিনি থাকেন ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী আইনুল হক মাদরাসা পাড়া গ্রামের স্বামীর বাড়িতে। ফারজানা আক্তার মোসলেমা আক্তার এর চাচাতো বোন। তার বিয়ে হয়েছে ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী পাতুপাড়া গ্রামে। বকুল বেগমের নামের তালিকায় চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ড্রাইভার সাইফুল ইসলামের মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে।

উপকারভোগী মোসলেমা আক্তার জানান, তার বাবা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা করে নিয়েছেন। বাবার কাছে সচিব ২ হাজার টাকা নিয়েছে মনে হয়। আমি আমার স্বামীর বাড়ী খালিশা চাপানী আইনুল হক মাদরাসা পাড়া গ্রামে থাকি।

রঞ্জুয়ারা বেগম এর স্বামী হাবিবুর রহমান বলেন, আমার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান ছিল। বাচ্চাটি নষ্ট হয়েছে। কার্ডটি সচিব এর মাধ্যমে করে নিয়েছি। তবে, কার্ড আছে, এর আগে ৪হাজার ৮শ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেয়েছি। গাজীপুরে থাকা ফাতেমা জানান, আমি বাবার বাসা গাজীপুর থাকি। সেখানে আমার স্বামী মিল্টন ইসলামও থাকেন।

দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের বকুল বেগম এর স্বামী ছামিনুর রহমান জানান, আমার যে বাচ্চার নামে মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা হয়েছে। তারা বয়স এখন ৩ বছর। সাইফুল ইসলাম আমার ছোট ভাই হয়। সে চেয়ারম্যান এর সাথে থাকেন। রেহেনা আক্তার এর ফোন নম্বরে ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেন তার ভাই মইনুল ইসলাম সাগর তিনি বলেন, রেহেনা আক্তার আমার বোন হয় তিনি কিশোরগঞ্জ উপজেলায় স্বামী বাড়ীতে থাকেন।

এঘটনায় টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলী টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি টাকা নেই। তবে ৫ শত টাকা নিয়েছি। অফিসের বিভিন্ন কাজ করতে হয় সেজন্য। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সাহিন এর দেখা না হলে তাকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় তার মতামত দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডিমলা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পূরবী রানী বলেন, যদি এর নাম থেকে থাকে তাহলে সেজন্য দায়ি ইপিআই কর্মকর্তা। তারা স্বাস্থ্য পরিক্ষার পরে নিশ্চিত করেন তার পরে আমরা তাকে নিশ্চিত করি। ইউপি পর্যায়ে যাচাই-বাচাই কমিটি বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে সেভাবে দেখা হয় না। আপনি অফিসে আসবেন অফিসে কথা হবে।

মেসেঞ্জার/রিপন/তারেক