ঢাকা,  শনিবার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

The Daily Messenger

জয়পুরহাটের পাঁচবিবির মৃত মর্জিনা বেওয়া বললেন, ‘আমি তো মরিনি’

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাটের পাঁচবিবির মৃত মর্জিনা বেওয়া বললেন, ‘আমি তো মরিনি’

ছবি : মেসেঞ্জার

সামাজিক নিরাপত্তার বয়স্কভাতাভোগী মর্জিনা বেওয়া অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। জীবিত এই বৃদ্ধা নারীকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্কভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি এক বছর পর ঘটনাটি জানতে পারেন। মর্জিনা বেওয়া (৬৫) বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে। তিনি পাঁচ বছর ধরে বয়স্কভাতা পাচ্ছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে হঠাৎ করেই তার ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। একারণে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

মর্জিনা বেওয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ জানতে পারেন, তিনি জীবিত নেই। একারণে ভাতার সু্বিভোগীর তালিকা থেকে তার নাম দেওয়া হয়েছে। তাকে কীভাবে মৃত দেখানো হলো, কারা এমনটি করল, কিছুই জানেন না মর্জিনা বেওয়া। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মর্জিনা বেওয়া বয়স্কভাতা পেতেন। ভাতার সুবিধাভোগীরা জীবিত আছেন কি না তা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যাচাই করা হয়। ছয় মাস আগে ধরঞ্জি ইউনিয়নের সুবিধাভোগী যাচাই করা হয়েছিল। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সমাজসেবা কার্যালয়ে ভাতাভোগীর তথ্য পাঠানো হয়।

সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতার সুবিধাভোগীদের তথ্য হাল নাগাদ করে ভাতা চালু রাখা হয়। বয়স্কভাতার সুবিধাভোগী রতনপুর গ্রামে মর্জিনা বেওয়া মারা গেছেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাল নাগাদ তথ্য দিয়েছিল। একারণে মর্জিনা বেওয়ার ভাতা বাতিল করে অন্য একজনকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মর্জিনা বেওয়া বলেন, পাঁচ মাস ধরে ভাতা আসা বন্ধ। এরপর  সমাজসেবা কার্যালয়ে ভাতা বন্ধের জানতে গিয়েছিলাম। সমাজ সেবা কার্যালয়ের লোকজন কাগজপত্র ঘেঁটে আমাকে জানাল, আমি মরে গেছি। একারণে আমার বয়স্কভাতা বাতিল করা হয়েছে। আমি এ কথা শুনে অবাক হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান আমার মৃত্যুর সনদও সমাজসেবা কার্যালয় দিয়েছেন।

কর্মকর্তাদের বললাম আপনার সামনে জীবিত দাঁড়িয়ে আছি। কি কারণে আমাকে মেরে ফেলে সরকারি আর্থিক সুবিধা নষ্ট করল। তিনি জানান, বয়সের কারণে কাজকর্ম কিছুই করতে পারেন না। বয়স্কভাতার টাকায় ওষুধ কিনে সেবন করতাম। ভাতা বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। যে এই কাজ করুক, আমার ব্যবস্থা করুক।

প্রতিবেশী রুহুল আমিন বলেন, মর্জিনা বেওয়া একজন গরীব মানুষ। এই জীবিত মানুষটিকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বাতিল করে আরেক জনকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ইউপির চেয়ারম্যানের সনদ দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর সনদ দেওয়ার আগে ওর্য়াডের ইউপির সদস্যের মর্জিনা বেওয়ার বাড়িতে গিয়ে যাচাই করা উচিত ছিল।

এই ইউনিয়নের এরকম ঘটনা আরও আছে। মর্জিনা বেওয়ার ভাতা বন্ধের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি। একই সঙ্গে যেদিন থেকে ভাতা বন্ধ রয়েছে সেদিন থেকে তার বকেয়া ভাতা দেওয়ারও দাবি করছি।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীরদের তথ্য যাচাই করতে স্বশরীরে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে  উপস্থিত থাকতে মাইকিং করা হয়েছি। তখন মর্জিনা বেওয়া উপস্থিত ছিলেন না। যারা উপস্থিত ছিলেন না তাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। তাদের মৃত্যু সনদ সমাজসেবা কার্যালয়ে দেওয়ার পর ভাতা বাতিল করা হয়। মর্জিনা বেগম চালাকি করেছেন। একারণে এই পরিস্থিত সৃষ্টি হয়েছে।

ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের লোকজনের উপস্থিতিতে ভাতাভোগীরা জীবিত আছেন কি না তা ইউনিয়ন পরিষদে যাচাই করা হয়। এরআগে ইউনিয়নজুড়ে মাইকিং করে ভাতাভোগীদের সময় জানানো হয়।

যাচাইয়ের সময় হয়তো মর্জিনা উপস্থিত ছিলেন না। একারণে তার নাম মৃতের তালিকায় উঠেছিল। মৃত্যু সনদ দেওয়ার পর    উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় মর্জিনার ভাতা বন্ধ করেছে। মর্জিনা বেওয়া জীবিত আছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছে। অনেক গুলো কাজ করতে গিয়ে আমাদের বড় ধরণের ভুল হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি  দ্রুত মর্জিনা বেওয়ার ভাতা চালুর ব্যবস্থা করছেন।

পাঁচবিবি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় মর্জিনা বেওয়াকে মৃত দেখানো হয়েছে। সে কারণেই তার ভাতা কার্ড বাতিল করে নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে মর্জিনা বেওয়া ভাতা ফের চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মেসেঞ্জার/রমি/তারেক

×
Nagad